অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :আগৈলঝাড়ায এনজিও’র হয়রানিমুলক মানহানির মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেন আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তপন বসু। তাকে দীর্ঘদিন এই মিথ্যা মামলার খেসারত পোহাতে হয়েছে। গতকাল জুডিশিয়াল ১ম বিচার আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্ল¬াহ্র আদালত সাংবাদিক তপন বসুকে মানহানির মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাসের আদেশ প্রদান করেন। আদালতের ধার্যকৃত পূর্ব নির্ধারিত দিনে আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বাদীসহ তার পক্ষের কৌশলী এম ফজলুল হক। বিবাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবি ও বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক এসএম ইকবাল, এ্যাডভোকেট বাসুদেব দাস, এ্যাডভোকেট আসাদুজাজামান ফিরোজ, এ্যাডভোকেট জগদীশ চন্দ্র শীল।
আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামে পাঁচ বার নাম পরিবর্তন করে এক যুগ পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বিহীন ‘বাংলাদেশ মিশন সার্ভিস’ নাম সর্বস্ব একটি এনজিও’র নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এলাকায় সাধারণ মানুষের জমি দখল, সন্ত্রাসী লালন, দাতা দেশসমুহের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামণায় এবং ওই এনজিও কর্তৃক এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় পুলিশী হয়রানি থেকে বাঁচতে স্থানীয় ৬শ’ ৪০ জনগনের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা এলাকাবাসীর অভিযোগ ও সরেজমিনে অনুসন্ধান করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই ‘আগৈলঝাড়ায় এনজিও’র নামে জমি দখল সন্ত্রাসী লালন ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ দৈনিক ডেসটিনি ও স্থানীয় সত্য সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে তথাকথিত এনজিও’র পরিচালক আমেরিকা প্রবাসী জন নীহার রঞ্জন বিশ্বাস আমেরিকা থেকে ই-মেইলে এনজিও’র পক্ষে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদকের বক্তব্যসহ একই বছর ১১ নভেম্বর প্রতিবাদ সংবাদ প্রকাশ করেন। এনজিও’র মনগড়া প্রতিবাদ বক্তব্যর সাথে সাংবাদিক তপন বসুর বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাকে এনজিও’র পক্ষে সংবাদ প্রকাশের জন্য বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেও ব্যর্থ হন তারা। মূলত: এনজিও’র আড়ালে দাতা দেশের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে ওই এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক ও জন নীহারের বড়ভাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক য্যাকব বিশ্বাস ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনের রীতি নীতি অমান্য করে তপন বসুকে একমাত্র আসামী করে হয়রানির উদ্যেশ্যে তার এনজিও’র ৬জন স্টাফকে স্বাক্ষী করে ৫০০/৫০১/৫০৬ ধারায় মিথ্যা মানহানি মামলা দায়ের করেন। যার এমপি নং- ৯৮/২০০৯। সি আর ২৩/১০। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার নন্দী অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন এসআই মাহবুবুর রহমানকে। এসআই মাহবুব সাংবাদিক তপন বসুর কোন বক্তব্য না নিয়ে এনজিও’র দ্বারা বিপুল অংকের আর্থিক লাভবান হয়ে আদালতের আর্জিতে বাদীর মানত ৬জন স্বাক্ষীর একই রকম স্বাক্ষর নিজ হাতে লিখে ২০১০ সালের ৯ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত রিপোর্ট আমলে নিয়ে সিআর ২৩/১০ মামলায় তপন বসুর প্রতি সমন জারি করলেও ওই সাব-ইন্সপেক্টর আদালতের সমন গোপন রাখেন। তপন বসু নিজস্ব সূত্রে সমনের কথা জানতে পেরে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবির মাধ্যমে জামিন প্রার্থণা করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। ওই বছর ২৩ আগস্ট আদালত ৫০৬ ধারা বাদ দিয়ে ৫০০ ও ৫০১ ধারায় চার্জ গঠন করেন। মামলায় এনজিও স্টাফ ৬জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৪জন আদালতে তাদের স্বাক্ষ প্রদান করেন।
আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, বাদী য্যাকব মামলায় শুধুমাত্র একজন সাংবাদিকককে হয়রানির জন্য দীর্ঘ পাঁচবছরে আদালতে প্রায়ই তার অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অজুহাতে সময় প্রার্থণা করে সময় অতিবাহিত করেন। অব্যাহত অজুহাতের ফলে আদালতের ধার্য দিনেও বাদী আদালতে উপস্থিত হয়েও সময় প্রার্থণা করলে আদালতে বিবাদী পক্ষের স্বাক্ষী ক্লোজের আবেদন মঞ্জুর করায় মামলার বাদী তার নিজের স্বাক্ষ্য প্রদান করতে পারেনি। দেড়বছর পর রায়ের জন্য ধার্য্য দিনে বাদী তার স্বাক্ষ্য দেয়ার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। দীর্ঘ দেড়বছর পর বাদী আদালতে তার স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত সাংবাদিক তপন বসুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালতের ধার্য দিনে গতকাল রোববার মিথ্যা মামলা থেকে তাকে বেকসুর খালাসের আদেশ প্রদান করেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ার সাংবাদিক তপন বসু বলেন, দীর্ঘ দিন হয়রানির পরেও আদালতের রায়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হয়রানি ও ক্ষতিপূরনের জন্য তিনি ওই এনজিও’র পরিচালকসহ মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বিরুদ্ধে অতিশীঘ্র ক্ষতিপূরণ মামলা করবেন বলেও জানান।