অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আদালতের জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে জিম্মি করে বিরোধীয় সম্পত্তিতে রাতের আঁধারে ৩শ’ ফুট প্রাচীর নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা।
সরেজমিন, আদালত ও বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা পশ্চিমপাড় গ্রামের কহিল উদ্দিন সরদারের ছেলে মোকলেস সরদারের সাথে পার্শ¦বর্তী আনসার উদ্দিনের ছেলে আজিমুদ্দিন গংদের সম্পত্তি নিয়ে চলমান বিরোধের জের ধরে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মোকলেসের বড়ভাই মোশারফ হোসেন জানান, তাদের বাবা মৃত কহিল উদ্দিন ১৯৫৭ সালের ২৭ মে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দুর্গামোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে বিশ্বনাথ ও বিপদভঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাগধা মৌজায় ১৯৭৭, ৩৮০, ১২০৯, ১৫৭৭ খতিয়ানসহ বিভিন্ন খতিয়ানে ২.৩৪ শতক জমি ক্রয় করেন। যা পরবর্তীতে বরিশাল ৬ষ্ঠ মুন্সেফ আদালতের আদেশের মাধ্যমে ১৯৫৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ক্রয়কারীর অনুকূলে জমি বুঝে দেয়ার আদেশপ্র্াপ্ত হন। দেশ স্বাধীনের পর ওই জমি ভিপি হওয়ার কারণে তাদের নামে রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। তবে ভিপি অবমুক্তির জন্য তারা আদালতে মামলা করেছেন। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে ওই জমিতে ডিক্রিসূত্রে মালিকানা দাবি করে আসছেন পার্শ্ববর্তী বাড়ির মৃত আনসার উদ্দিনের ছেলে আজিমুদ্দিন ও তাদের ৯ ভাই।
বিরোধীয় জায়গা বেদখলের আশংকায় মোকলেস বাদী হয়ে সাইফুল মিয়াসহ ১৮জনকে বিবাদী করে বরিশাল অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থিতাদেশ চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত ওই জায়গার উপর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা জারি করেন। আদালতের নির্দেশে আগৈলঝাড়া ওসি গত শুক্রবার বিবাদীদের নোটিশ প্রদান করেন। এরপরেও বিবাদীরা সম্পত্তি বৈধ দখলের পাঁয়তারা করলে মোকলেস ৩ অক্টোবর বরিশার পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। পুলিশ সুপার ওসি ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। ডিবির পক্ষ থেকে সোমবার ৫ অক্টোবর বিবাদীদের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য রোববার নোটিশ প্রদান করে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওসি মনিরুল ইসলামকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে শনিবার রাতে সাইফুল ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে তিন শতাধিক লোক এশার নামাজের পর প্রতিপক্ষ মোশারফ ও মোকলেসের পরিবারকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাতের আঁধারে বিরোধীয় জায়গায় রাজমিস্ত্রী দিয়ে ৩শ’ ফুট দেয়াল নির্মাণ করে।
মোকলেস ও মোশারফ অভিযোগে আরও বলেন, ওই জায়গায় আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে ওসি মনিরুল ইসলামকে কয়েক দফায় ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। শনিবার বিকেলে দখলের পাঁয়তারা থানায় বসে ওসিকে জানালে ওসি মনিরুল ইসলাম তাদের কাছে ১লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় প্রতিপক্ষরা দেয়াল নির্মাণ করবেন বলেও তাদের জানিয়ে দেন। এত টাকা দিতে তারা অস্বীকার করেন। সেই মোতাবেক রাতে জায়গা দখলের সময় বিষয়টি ওসিকে জানালে তিনি এএসআই পরেশকে রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করলেও কার্যত: এএসআই কোন ভূমিকা রাখেননি। বরং ওসির রেফারেন্স দিয়ে বলেন স্যারের ব্যাপার, আমার কিছু করার নেই। অন্যদিকে মোকলেস বলেন, তারা সম্পত্তি ভিপির কারণে রেকর্ড পাননি। অথচ সেই ভিপি জমি অবৈধ অর্থের বিনিময়ে আগৈলঝাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ১৯-০৮-১৫ তারিখ আজিমুদ্দিন গংদের নামে জমা খারিজ খতিয়ান ২১৭৩ এর মাধ্যমে রেকর্ড করে দেন। যা ভূমি অফিসের কারেকশন বহিতেও লিপিবদ্ধ নেই। এছাড়া আজিমুদ্দিন গংদের দাবিকৃত ডিক্রি জেলা রেকর্ড রুমে সার্চিং-এ পাওয়া যায়নি বলেও জানা গেছে। এব্যাপারে মুলাদী উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিরোধীয় জায়গা হাল জরিপে ১/১ খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তাদের নামে দখল রেকর্ড রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের জায়গায় তারা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন, তা দিনে-রাতে যেকোন সময়েই করতে পারেন। প্রতিপক্ষরা একসময়ে ডিক্রিমূলে নিলাম মূলে জায়গা দাবি করে আসছেন। তাদের দাবির ভিত্তি নেই।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পেয়ে ওসি ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনানূগ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।