কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া থেকে: অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ৬ বাংলাদেশির কাছ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছেন মালয়েশিয়ায় বসবাসরত ওয়াকিদুজ্জামান ডাবলু নামে আরেক প্রতারক। গত ২৭ জুন মালয়েশিয়ার ডান ওয়াঙ্গি পুলিশ স্টেশনে ডাবলুর বিরুদ্ধে এ নিয়ে অভিযোগ করেছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস।
থানায় অভিযোগ করে তদন্তের আবেদন করেন দূতাবাসের কাউন্সেলর (লেবার) সায়েদুল ইসলাম।
তিনি অগ্রদৃষ্টিকে জানান, বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (পাসপোর্ট নং বিসি ০৪৬০১৪৫) সম্প্রতি দূতাবাসে ডাবলুর হাতে প্রতারিত হওয়ার রিপোর্ট করেন। রিপোর্টে রফিকুল জানান, ওয়াকিদুজ্জামান ডাবলু (পাসপোর্ট নং এএ ৩২৪৩১৩৪) প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার রিঙ্গিত (৩৬ লাখ টাকা) হাতিয়ে নিয়েছেন। রফিকুলের আত্মীয়দের অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা এবং কাজের অনুমোদন জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ অর্থ হাতিয়ে নেন ডাবলু।
সায়েদুল ইসলাম জানান, তদন্ত সাপেক্ষে মালয়েশিয়ান আইনে ডাবলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
এ প্রেক্ষিতে গত ২৭ জুন দূতাবাস থেকে ডাবলুর কাছে একটি অর্ডারও পাঠানো হয়। অর্ডারে বলা হয়, ‘আপনি রফিকুল ইসলামের আত্মীয়দের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর নামে টাকা নিলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি এবং রফিকুল ইসলামের টাকাও ফেরত দেননি।’
এজন্য গত ৪ জুলাই ডাবলুকে দূতাবাসে হাজিরাও দিতে বলা হয়। তবে সূত্র জানায়, ডাবলু সেদিন হাজিরা দেননি দূতাবাসে।
২৭ জুন দূতাবাসের অর্ডারের পর ২৯ জুন আদালতের মাধ্যমে ডাবলুকে ক্ষতিপূরণসহ ২ লাখ ২৫ হাজার রিঙ্গিত শোধ করার উকিল নোটিশ পাঠান আব্দুল মালিক বিন আব্দুল হাকিম নামে এক আইনজীবী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম অগ্রদৃষ্টিকে জানান, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ বছরের মেরিটাইম ক্রু (সাব ক্লাস ৯৮৮) ভিসার কথা বলে সৈয়দ মিসির আলী, রেজওয়ান আহমেদ কোরেশি, মিলাদ আহমেদ কোরেশি, আলী ইউসুফ মোহাম্মদ তানিম, জুবের রশিদ চৌধুরী, কাজী শাহরিয়ার আহমেদ ও রফিকুল হকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ওই টাকা লেনদেনে ১০০ টাকার স্টাম্পে স্বাক্ষর করেন প্রথম পক্ষ হিসেবে ওয়াকিদুজ্জামান ডাবলু এবং দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে রফিকুল ইসলাম।
চুক্তি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া গমনেচ্ছু সকলকে বিমানভাড়াসহ ২৬ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত দেওয়ার কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী ভিসা হওয়ার আগেই ৭ জনের ১ লাখ ৫৪ হাজার রিঙ্গিত মালয়েশিয়ার ‘মে ব্যাংকে’ জমা দেওয়া হয়। এর বাইরে ট্রানজিট ভিসা পাওয়ার পর সকলকে ৩ হাজার করে ২১ হাজার রিঙ্গিত জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ওই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই গমনেচ্ছু ৭ জনকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কাজে অনুমোদনপত্র এবং ট্রানজিট ভিসা পাইয়ে দেওয়ার কথা ছিল ডাবলুর।
ওই চুক্তিপত্রে আরও স্বাক্ষর করেন বেলাল হোসেন, হাফিজুর রহমান, শাহাদাত হোসেন এবং আহসান হাবিব নামে মালয়েশিয়ার ৪ প্রবাসী বাংলাদেশি।
কুয়ালালামপুর সূত্র অগ্রদৃষ্টিকে জানায়, ডাবলু এক সময় মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে আদম ব্যবসায় নামেন।
মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কুয়ালালামপুরের ক্লাব এবং মুজরাতেই তিনি এসব অর্থ ব্যয় করেন। বর্তমানে পলাতক রয়েছেন প্রতারক ডাবলু।