আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এখনো সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে ঢুকছে।
এর মধ্যে কত অভিবাসীকে আসলে থাকতে দেয়া হবে – তা নিয়ে কথা বলতে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া আর চেক প্রজাতন্ত্র – এই চার দেশের মন্ত্রীরা আজ প্রাগে এক বৈঠকে বসেছেন।
এই দেশগুলো ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রস্তাবিত বাধ্যতামূলক কোটা আরোপের বিরোধী, এবং কূটনীতিবিদরা চেষ্টা করছে ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করে এই অভিবাসীদের থাকতে দেবার পরিকল্পনায় সবাইকে রাজী করানো যায় কিনা।
কোন দেশ কতো শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে পারে এই বিতর্কের মধ্যেই এ সপ্তাহে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো জোরদার করা হয়েছে।
হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ছাড়াও এই সঙ্কট নিয়ে আগামীকাল আলোচনায় বসছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আর তার পরদিনই বুধবার ই.ইউরো নেতারা বসতে যাচ্ছেন জরুরী বৈঠকে।
এসব বৈঠকের আগে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলস বলেছেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে এখনও যেসব বিভক্তি রয়েছে, এসব বৈঠকে সেসব কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন-
তিনি বলছেন “২৮টি দেশর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান যখন একই টেবিলে বসে আলোচনা করবেন তখন একটা কিছু বেরিয়ে আসবে। মত-ভিন্নতা হয়তো আসতে পারে তবে আমি আশাবাদী কারণ আমাদেরকে একটা সমঝোতায় আসতেই হবে”।
বলা হচ্ছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হতে পারে। তবে কোন দেশ কতো শরণার্থীকে নেবে সে বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। জার্মানি বলছে, সবদেশকে মোটামুটি সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে।
কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের চারটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদের আজকের বৈঠকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারেন।
এই মত-বিভেদের মধ্যেই ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। গত শনি ও রবিবারেই আরো কয়েক হাজার শরণার্থী ঢুকেছে অস্ট্রিয়ায়। শনিবার ঢুকেছে প্রায় ১০ হাজার। ধারণা করা হচ্ছে, রবিবারেও প্রায় একই সংখ্যায় ঢুকেছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ মনে করছে, হাঙ্গেরি থেকে আরো বহু শরণার্থী আসতে পারেন। তাদের বেশিরভাগই যেতে চান জার্মানি।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেছেন, শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব থেকে কেউই রেহাই পেতে পারবে না।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট বলছেন, “আমরা সবাই যেহেতু একই মূল্যবোধ আর নীতিতে বিশ্বাস করি, সেকারণে কেউ এই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারবে না”।
জার্মান চ্যান্সেলরকে আমি বলেছি এই প্রক্রিয়াটা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এটা যাতে এরকম কিছু না হয় যে শুধুমাত্র কিছু দেশই শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
তবে সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকজনকে ইউরোপে তাদের কাছের কোনো দেশে আশ্রয় দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।
এই পরিস্থিতিতে সার্বিয়া থেকে বহু শরণার্থী ক্রোয়েশিয়াতে যাচ্ছেন। ক্রোয়েশিয়া শুরুতে শরণার্থীদের স্বাগত জানালেও পরে বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
পরে তারা তাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরির সীমান্তের দিকে। আর হাঙ্গেরি তাদেরকে অস্ট্রিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সংবাদদাতারা বলছেন, এসব শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই আসছেন সিরিয়া থেকে, তারপরেই আফগানিস্তান। এরেত্রিয়া, নাইজেরিয়া এবং সোমালিয়া- আফ্রিকার এসব দেশ থেকেও লোকজন ইউরোপে ঢুকতে চেষ্টা করছেন।