Menu |||

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের বিক্ষোভ ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে স্মরণ

জাকির সিকদার  :আজ সাভারের রানা প্লাজার সামনে নিহতদের স্মরণে  তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার সকাল ১১ টা  থেকেই রানা প্লাজার সামনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ও কারখানা শ্রমিক, ভবন ধসে আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা জড়ো হতে থাকে। ধসে পড়া ভবনের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং ভবন ধসে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তারা। তাদের সাথে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ এন্ট্রি ফায়ার এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নিহতদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। রবিবার সকালে সবার চোখে মুখে ছিল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির জন্য দৃঢ শপথ ও ২৪ এপ্রিলকে শোক দিবস ঘোষণার। এদিকে দিনটিকে স্মরণ করতে রবিবার সকাল থেকেই ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকে আহত শ্রমিক, নিহত ও নিখোঁজের স্বজনেরা। তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কালো ব্যাজ
ধারণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শ্রমিকরা রানা প্লাজার সামনে মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন। এসময় রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রচন্ড গরমে বেশ কয়েকজন হত বিহব্বল স্বজন অচেতন হয়ে পড়েন। তাদেরকে ধরাধরি করে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের স্বজনেরা বলেন, ভবন ধ্বসের তিন বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় অনেক আহত শ্রমিক স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।
ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা অবিলম্বে ভবন মালিক রানার ফাঁসি দাবী করে বলেন, ভবন ধসের আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানায় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও ওই ভবনের মালিক সোহেল রানা শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কারাখানায় জোড়পূর্বক প্রবেশ করাতে বাধ্য করেছেন। সেদিন যদি সোহলে রানা শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে কারখানায় প্রবেশ না করাতো তা হলে আজ হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। তাই তারা অবিলম্বে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাষির দাবী জানান।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ধ্বসের তিন বছর পুর্তিতে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়ামাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতি হিসেবে উপস্থিত থেকে রানা প্লাজায় নিহত, নিখোঁজসহ সকল শ্রমিক পরিবারবর্গের দুঃখের বিষয়টি প্রধান মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে উপযুক্ত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এসময় তিনিও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কিছু দিনের মধ্যে রানা প্লাজার স্থলে একটি স্থায়ী শহীদ বেদী নির্মাণের আশ্বাস দেন। এসময় তার সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মোল্যাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান রানা প্লাজার সামনে নির্মিত শহীদ বেধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অন্যদিকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নিহতদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। এসময় বিভিন্ন আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনসহ দর্শনার্থীরা ভির জমায় প্রদর্শনীতে। প্রিয় স্বজনের ছবি ও স্মৃতি তুলে ধরে অঝোড়ে কাদতে থাকেন অনেক স্বজনেরা।
এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ এন্ট্রি ফায়ার এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ২৪ এপ্রিশ শোক ও শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস পালনে কালো ব্যাজ ধারন করে দোষীদের শাস্তি প্রদানসহ আহত, নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরন দাবী করেন।
রানা প্লাজা ধ্বসের দুর্ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি শহীদ বেদি নির্মাণসহ নিহতদের সারাজীবনের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনার দাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা।

রানা প্লাজা ধ্বসের ভয়াল স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় সেখানকার শ্রমিকদের। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে যারা ফিরে আসতে পেরেছেন, এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের অনেকে। আর দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা চলছে যাদের, তাদের অনেকেরই নেই অর্থের সংস্থান।

এই অবস্থায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবী দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের জন্য সাভারে একটি পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট সেন্টার চালু করা। যেখানে বিনামূল্যে শ্রমিকরা পাবেন শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসা।

বেঁচে থেকেও যেন মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করছেন সাভারের এই নারী নিলুফার বেগম। এক সময় শক্ত হাতে ধরে ছিলেন সংসারের হাল, এখন করুণ চোখে চেয়ে দেখছেন অভাব আর দারিদ্রে নিজ পরিবারের নি:স্ব হয়ে যাওয়ার গল্প। রানা প্লাজার ধসে হারিয়েছেন চলন শক্তি।

এখন স্বামীর ছোট চায়ের দোকানের আয়ে চলে কোনো মতে চলে সংসার। এক মাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও উচ্চাশা নেই কোনো।

নিলুফার বলছিলেন, ভবন ধসে আহত হওয়ার পর যে সহায়তা পেয়েছিলেন তা দিয়ে পুরো চিকিৎসা হয়নি। উল্টো চিকিৎসার জন্য নেয়া ঋণের টাকার সুদ মেটাতেই হিমশিম অবস্থা।

তবে সবার গল্পই নিলুফারের মত নয়। আহত অনেক শ্রমিকই চিকিৎসা শেষে ফিরে এসেছেন কাজে। কিন্তু ভয়াল সে সময়ে মনের ভেতর ভয় আর শঙ্কার যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে তার দূর হচ্ছে না কিছুতেই।

আহত শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতার মত মানসিক চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানালেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু।

ভবিষ্যতে আর কোনো রানা প্লাজার ঘটনা ঘটবে এমন দু:স্বপ্ন হয়তো আর কেউ দেখে না, তারপরও শ্রমিক সংগঠন গুলোর দাবী কর্মক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের ক্ষতির শিকার হলে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে থাকবে একটি জাতীয় কাঠামো। যেখানে শ্রমিকের মানসিক সামাজিক ও আর্থিক বিষয়গুলো নিশ্চিত হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে গাউসিয়া কমিটি ফাহাহিল শাখার অভিষেক ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে দৈনিক কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

» কুয়েতে হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিল-২০২৪ অনুষ্ঠিত

» বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে আমিন সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

» দেড় শতাধিক কনটেইনারে ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসীদের কার্গো মালামাল এর জটিলতা

» এমপক্সের টিকা নিশ্চিত করতে জরুরি দরপত্রের ডাক ইউনিসেফের

» আদালত বললে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা করব: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের ত্রাণ বিতরণ

» এক ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের ৬দেশ ভ্রমণের সুযোগ

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের বিক্ষোভ ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে স্মরণ

জাকির সিকদার  :আজ সাভারের রানা প্লাজার সামনে নিহতদের স্মরণে  তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার সকাল ১১ টা  থেকেই রানা প্লাজার সামনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ও কারখানা শ্রমিক, ভবন ধসে আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা জড়ো হতে থাকে। ধসে পড়া ভবনের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং ভবন ধসে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তারা। তাদের সাথে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ এন্ট্রি ফায়ার এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নিহতদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। রবিবার সকালে সবার চোখে মুখে ছিল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির জন্য দৃঢ শপথ ও ২৪ এপ্রিলকে শোক দিবস ঘোষণার। এদিকে দিনটিকে স্মরণ করতে রবিবার সকাল থেকেই ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকে আহত শ্রমিক, নিহত ও নিখোঁজের স্বজনেরা। তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কালো ব্যাজ
ধারণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শ্রমিকরা রানা প্লাজার সামনে মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন। এসময় রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রচন্ড গরমে বেশ কয়েকজন হত বিহব্বল স্বজন অচেতন হয়ে পড়েন। তাদেরকে ধরাধরি করে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের স্বজনেরা বলেন, ভবন ধ্বসের তিন বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় অনেক আহত শ্রমিক স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।
ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা অবিলম্বে ভবন মালিক রানার ফাঁসি দাবী করে বলেন, ভবন ধসের আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানায় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও ওই ভবনের মালিক সোহেল রানা শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কারাখানায় জোড়পূর্বক প্রবেশ করাতে বাধ্য করেছেন। সেদিন যদি সোহলে রানা শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে কারখানায় প্রবেশ না করাতো তা হলে আজ হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। তাই তারা অবিলম্বে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাষির দাবী জানান।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ধ্বসের তিন বছর পুর্তিতে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়ামাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতি হিসেবে উপস্থিত থেকে রানা প্লাজায় নিহত, নিখোঁজসহ সকল শ্রমিক পরিবারবর্গের দুঃখের বিষয়টি প্রধান মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে উপযুক্ত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
পরে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এসময় তিনিও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কিছু দিনের মধ্যে রানা প্লাজার স্থলে একটি স্থায়ী শহীদ বেদী নির্মাণের আশ্বাস দেন। এসময় তার সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মোল্যাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান রানা প্লাজার সামনে নির্মিত শহীদ বেধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
অন্যদিকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নিহতদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। এসময় বিভিন্ন আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনসহ দর্শনার্থীরা ভির জমায় প্রদর্শনীতে। প্রিয় স্বজনের ছবি ও স্মৃতি তুলে ধরে অঝোড়ে কাদতে থাকেন অনেক স্বজনেরা।
এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ এন্ট্রি ফায়ার এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ২৪ এপ্রিশ শোক ও শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস পালনে কালো ব্যাজ ধারন করে দোষীদের শাস্তি প্রদানসহ আহত, নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরন দাবী করেন।
রানা প্লাজা ধ্বসের দুর্ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি শহীদ বেদি নির্মাণসহ নিহতদের সারাজীবনের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনার দাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা।

রানা প্লাজা ধ্বসের ভয়াল স্মৃতি এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় সেখানকার শ্রমিকদের। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে যারা ফিরে আসতে পেরেছেন, এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের অনেকে। আর দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা চলছে যাদের, তাদের অনেকেরই নেই অর্থের সংস্থান।

এই অবস্থায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবী দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের জন্য সাভারে একটি পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট সেন্টার চালু করা। যেখানে বিনামূল্যে শ্রমিকরা পাবেন শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসা।

বেঁচে থেকেও যেন মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করছেন সাভারের এই নারী নিলুফার বেগম। এক সময় শক্ত হাতে ধরে ছিলেন সংসারের হাল, এখন করুণ চোখে চেয়ে দেখছেন অভাব আর দারিদ্রে নিজ পরিবারের নি:স্ব হয়ে যাওয়ার গল্প। রানা প্লাজার ধসে হারিয়েছেন চলন শক্তি।

এখন স্বামীর ছোট চায়ের দোকানের আয়ে চলে কোনো মতে চলে সংসার। এক মাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও উচ্চাশা নেই কোনো।

নিলুফার বলছিলেন, ভবন ধসে আহত হওয়ার পর যে সহায়তা পেয়েছিলেন তা দিয়ে পুরো চিকিৎসা হয়নি। উল্টো চিকিৎসার জন্য নেয়া ঋণের টাকার সুদ মেটাতেই হিমশিম অবস্থা।

তবে সবার গল্পই নিলুফারের মত নয়। আহত অনেক শ্রমিকই চিকিৎসা শেষে ফিরে এসেছেন কাজে। কিন্তু ভয়াল সে সময়ে মনের ভেতর ভয় আর শঙ্কার যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে তার দূর হচ্ছে না কিছুতেই।

আহত শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতার মত মানসিক চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানালেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু।

ভবিষ্যতে আর কোনো রানা প্লাজার ঘটনা ঘটবে এমন দু:স্বপ্ন হয়তো আর কেউ দেখে না, তারপরও শ্রমিক সংগঠন গুলোর দাবী কর্মক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের ক্ষতির শিকার হলে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে থাকবে একটি জাতীয় কাঠামো। যেখানে শ্রমিকের মানসিক সামাজিক ও আর্থিক বিষয়গুলো নিশ্চিত হবে।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Tue, 22 Oct.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।