জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিষ মুক্ত সবজি ঊৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। জমিতে সবজি চারা রোপনের পর পোকার আক্রমণ থেকে চারা ও ফল রক্ষার্থে সবজি উৎপাদনে বড় একটি অংশ শুধু কীনাশকের জন্য ব্যয় হয়ে যায়। কীটনাশক ব্যহারের ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়া, ফসলের উপকারী পোকা মারা যাওয়া, সবজী বিষযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি মানবদেহেরও ক্ষতি হয়। এসব কিছুর সমাধান হিসেবে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী। এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত উৎপাদিত সবজি একদিকে স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী অন্যদিকে স্বল্প খরচ হওয়ায় চাষীরা এই পদ্ধতির চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলা ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ২’শ হেক্টর জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ মুক্ত সবজি চাষ হয়েছে। এই ফাঁদগুলো প্লাসটিকের গোটার তৈরী। যেটির দাম মাত্র ২৫ টাকা। আর এই কোটার মধ্যে এক ধরনের স্ত্রী পোকার সেন্ট (লিওর) দিয়ে সবজি ক্ষেতে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। স্ত্রী পোকার কাজ হচ্ছে ডিম পাড়া। আর পুরুষ পোকা শুধুই বংশ বিস্তার করে। সবজি ক্ষেতে আসা ক্ষতিকর পুরুষ পোকাগুলো স্ত্রী পোকার সাথে সেক্স মিলনের জন্য এতে ছুটে আসছে। আর ওই প্লস্টিক কোটার মধ্যে পড়ছে আর পুরুষ পোকাগুলো মারা যাচ্ছে। তাই পুরুষ পোকার সংকট বাড়ছে। ফলে পোকার বংশ বিস্তারও হ্রাস পচ্ছে বলে বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন।
উপজেলার পৌরসভায় দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানায়, প্রতি আড়াই শতাংশ জমিতে ১টি সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করলে তার কার্যকারিতা থাকে প্রায় দেড় মাস। ১টি সেক্স ফেরোমন দিয়ে ১ হাজারেরও বেশী পোকা মারা সম্ভব। পৌরসভায় প্রায় ২৫০ হেক্টর বা ৬২৫ একর জমিতে সারাবছর সবজি উৎপাদন হয়। প্রতিবছর এসব সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর ব্যয় হতো। ফলে কৃষক লাভের দেখা পেতো খুবই কম। সেক্স ফেরোমন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে এবছর কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন। এ বছর শুধুমাত্র পৌরসভার ১১৪৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজি ও বাকী জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এসময় তিনি রাঙ্গুনিয়া পৌরসভায় ” কন্ট্রাক্ট ফার্মিং” এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন সম্ভব বলেও জানান। শুধু কার্যকরী উদ্যোগ নিলে হবে।উপজেলার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও মাঠে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এ গ্রামের এনতাজুর রহমান ১ বিঘা, নাঈম উদ্দিন ২ বিঘা জমিতে বেগুন রোপন করেন। এসবতে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে সেক্স ফেরামন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকার বালাই নেই বলে তিনি জানান। এতে শুধুমাত্র সার, পানি দিতে হচ্ছে। সপ্তাহে বিঘাপ্রতি ১৫/২০ মন বেগুন উঠবে বলে তিনি আশা করেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এ মৌসুমে বিঘা প্রতি ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন। অপরদিকে পৌরসভার ঘাটচেক এলাকার মো. জাহাঙ্গীর ১ বিঘা, মো. আবছার ১ বিঘা ও মো. মোরশেদ ২ বিঘা জমিতে এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত কোমরা জাতীয় ফসলের চাষ করছেন। এসব চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেরমন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। বেগুন বিঘা প্রতি চারা, সার, সেচ মিলে ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলার পোমরা এলাকার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল খালেদ জানান, উপজেলার সবজি চাষীরা বিষমুক্ত সবজি চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে চাষীরা আর্থিকভাবে অধিক লাভমান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা করিমা আক্তার বলেন, সেক্স ফেরোমন পদ্ধতির উৎপাদিত সবজি একদিকে স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী অন্যদিকে উৎপাদনে খরচও বেশ কম হয়। তাই এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে চাষীরা ঝুঁকে পড়েছেন। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে প্রায় সবিজ জমিতে এই সেক্স ফেরোমন পদ্ধতিতে বিশমুক্ত সবজি চাষ হয়েছে।