উখিয়ার বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও কুতুপালং রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শনের ওপর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় দিনের মতো উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিং তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টাব্যাপী মিয়ানমারে নির্যাতনেরশিকার ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে সে দেশেরসেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা এখানে মোটামুটি ভালো আছে। তিন দিনধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের পাশেদাঁড়িয়েছে। আশ্রয় দিয়েছে।
মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র যুগ্ম সচিব বাকি বিল্লাহ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ওইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা সাথে ছিলেন।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গানাগরিকদের খোঁজ-খবর নেন। কুতুপালং বস্তিতে অবস্থান করা মিয়ানমারের নাইচ্ছা প্রু গ্রামের জামালিদা, আমিনাবেগম, হামিদা বেগম-সহ ২০ জন মহিলা ও খেয়ারি প্রাং গ্রামের মোহাম্মদ করিম, আব্দু সালামসহ ১০ জনপুরুষের সাথে কথা বলেন তিনি। এদের মধ্যে মিয়ানমারের গৌজবিল, সিকদারপাড়া, মাইচং, খিয়ায়ী প্রাং গ্রামেরনির্যাতনের শিকার হওয়া রোহিঙ্গারা রয়েছেন।
এর আগে বিশেষ দূত সকাল নয়টার দিকে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুজোহার সাথেরোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
মিয়ানমার কিয়ারী প্রাং গ্রামের নির্যাতিত রোহিঙ্গা আবদুস শুক্কুর, আবদুল আলিম, মো. গফুর জাতিসংঘেরবিশেষদূতকে বলেন, মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবকরা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনকরেছে, হত্যা করেছে অনেককেই, ধর্ষণ করেছে অগণিত নারীকে, গণগ্রেফতার, নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে, অনেকশিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্যহয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে রোহিঙ্গারা কাছে পেয়ে মনের দুঃখের কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেলে রোহিঙ্গারা যেকোনো মুহূর্তে মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি। শুধু তাই নয় ওই দেশেরোহিঙ্গাদের চলাচলের নিষাধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে এবং রাখাইন সম্প্রদায়সহ অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মতোস্বাধীনভাবে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি জানতে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে চার দিনের সফরেবাংলাদেশে আসেন। এর আগে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার বালুখালী নতুন বস্তি, ২২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে লেদা ওসীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ইয়াংহি লি গত জানুয়ারি মাসের ১০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে ১২ দিনসফর করেন। তিনি দুপুরে কক্সবাজার ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন। সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগের কথারয়েছে তার।