জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : জীবনে বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নহীনমানুষ জীবনে বড় হতে পারে না। বাল্যকালের দেখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েএই কথা গুলোর যথার্থ প্রমাণ দিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার ৩ যুবক। লাখ লাখপরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারী, লিখিত ওমৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে তারা এই কৃতিত্ব দেখাল। তাদেরএই সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি উপজেলার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে বলে বিভিন্নক্ষুদে বার্তা, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন বার্তায়শুভানুধ্যায়ীরা মন্তব্য করেছেন।স্বপ্ন জয়ী এই ৩ যুবক হলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকাপ্রতীকে রাঙ্গুনিয়ার ২ বারের প্রার্থী উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের মরহুম এমছাদেক চৌধুরীর চাচাতো ভাই আতিকুর রহমান চৌধুরী, বেতাগী ইউনিয়নের সুজনচক্রবর্তী ও তিন সৌদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আবু তালেব। বিসিএস পরিসংখ্যানেউত্তীর্ণ হওয়া আতিক চৌধুৃরীকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরোতে, বিসিএস প্রসাশনে উত্তীর্ণ হওয়া মোহাম্মদ আবুতালেবকে খুলনা বিভাগে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মেজিস্ট্রেট পদে ওবিসিএস তথ্য থেকে উত্তীর্ণ হওয়া সুজন চক্রবর্তীকে বাংলাদেশ বেতার সিলেটবিভাগীয় কার্যলয়ে যোগদান করতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনেরমাধ্যমে বলা হয়েছে।তারা জানায়, ‘ছোট বেলা থেকেই শিক্ষকদের মুখে শুনতাম, বিসিএসে উত্তীর্ণহতে হলে অনেক পড়ালেখা জানতে হয়। কারণ এইখানে উত্তীর্ণ হতে হলে শতভাগপড়ালেখা দিয়েই হতে হয়। বাংলাদেশের কয়েকটি শতভাগ দুর্নীতি মুক্তপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি অন্যতম। শিক্ষকের কথাগুলো শুনেই বিসিএসে উত্তীর্ণহওয়ার স্বপ্নে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করি’। বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার অধম্যইচ্ছায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে অনলাইনে ফরম ফিলাপের মাধ্যমে আবেদন করেনতারা। সাথে শুরু করেন কঠোর অধ্যাবসায়। একই বছরের ২৪ মে প্রিলিমনারীপরীক্ষায় অংশ নেন এই তিন জন। পরীক্ষার প্রায় ১ মাস পর ২১ জুন ফল প্রকাশহলে তারা ৩ জনই উত্তীর্ণ হয়। এর পর শুরু হয় লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। যেকরেই হোক উত্তীর্ণ হতে হবে এই বাসনাকে ধারণ করে পরের বছর ২০১৪ সালেঅনুষ্ঠিত হওয়া লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। স্বপ্ন পূরণের তীব্র নেশায় আশক্তএই ৩ যুবক এতেও উত্তীর্ণ হয়ে লক্ষ্য অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে যায়। পরে২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ভাইবাতেও দমিয়ে রাখা যায়নি এদের। মৌখিক পরীক্ষায়পরীক্ষকের এক একটি প্রশ্নের জবাব যেন স্বপ্নের এক একটি সিড়ি হয়ে ধরা দেয়এই ৩ জনের কাছে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, এনএসআইভেরিফিকেশন, ক্যাম্পাস ভেরিফিকেশনেও ঠিকে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেনতারা। সব সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিস্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় গত ১৬ মে। এতে তাদের প্রাথমিক পর্যায়েসরকারী ৩ উপযুক্ত পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু তাদের স্বপ্ন জয়েরনেশা একদিন তাদের এডিসি, ডিসি এমনকি সচিব পর্যায়ে পৌছে দেবে বলে বিভিন্নক্ষুদে অভিনন্দন বার্তায় উপজেলার অনেকেই মন্তব্য করেছেন।পরিচিতি : আতিকুর রহমান চৌধুরী উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটারহাবিবুর রহমান চৌধুরী ও ছমেরা বেগমের পুত্র। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে আতিকপঞ্চম। সে সরফভাটা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, চট্টগ্রাম সরকারীসিটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সবিভিাগে বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। সুজন চক্রবর্তী উপজেলার বেতাগীইউনিয়নের শোকহরণ চক্রবর্তী ও রমা চক্রবর্তীর পুত্র। সে মহামুনিএ্যাংলোপালি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজ থেকেএইচএসসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিনে চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজ থেকেব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সেসবার ছোট। মো.আবু তালেব উপজেলার তিন সৌদিয়া গ্রামের আবু মোহাম্মদ ওআনোয়ারা বেগমের পুত্র। ২ ভাই ও ৬ বোনের মধ্যে তালেব ২য়। সে পোমরাবঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চুয়েট ক্যাম্পাস স্কুল এন্ড কলেজথেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স) ও পাবলিকএডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে এমএসএস শেষ করেন।৩৪ তম বিসিএসে সাফল্যের পিছনে তিন জনেই শিক্ষকদের প্রেরণা, পরিবারেরসহযোগীতা ও উৎসাহের কথা জানিয়েছেন।‘লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র হাজার বিশেক উত্তীর্ণ হয়। আর তাতেযে ঠিকবো তার উপর অবিচল বিশ্বাস থাকলেও স্বপ্ন এতো দ্রুত ধরা দেবেবিশ্বাস হয়নি’ বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের চোখে মুখেএখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার অধম্য ইচ্ছা। অদূর ভবিষ্যতে সরকারী উচ্চ পর্যায়েঅধিষ্টিত হওয়ার বাসনায় সৎভাবে কঠোর অধ্যাবসায় চালিয়ে নিতে চান এই স্বপ্নজয়ী যুবকেরা। নতুনদের এইভাবে সফল হতে বইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখার কোনবিকল্প নেই বলে তারা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বিসিএসে উত্তীর্ণহতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাংলা, ইংরেজী, গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জন,সাধারণ জ্ঞান ও চলমান বিশ্বের আলোচিত ঘটনাবলি জানার কোন বিকল্প নেই।তাদের অভিনন্দন জানিয়ে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরাপ্রত্যাশা করে বলেন, স্বপ্ন যুবকদের ঘাটে বার বার স্বপ্নতরী এভাবে এসেভিরুক সেই আশা রাখি এবং তাদের মতো নতুরাও কঠোর পরিশ্রম করে স্বপ্ন ছিনিয়েআনুক সে দোয়া করি।