বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
বায়োমেট্রিক তথ্য মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করবে -এই যুক্তিতে যারা ঐ রিট মামলাটি করেছিলেন — তারা এই রায়ের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি।
এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কাজ শেষ হতে আর মাত্র আঠারো দিন বাকি।
আদালতের রায়ে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিটিআরসির দেয়া নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করা এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে সেটি সরাসরি জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেসে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির আইনজীবী মুরাদ রেজা জানান, এই রায়ের ফলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা নিয়ে জনগণের দ্বিধা দূর হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, “রায়ে বলা হয়েছে, আঙুলের ছাপ নিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশনের যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। অন্যথায় একেকটি ঘটনার জন্য অপারেটরকে সর্বোচ্চ তিনশো কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে বিটিআরসি।”
মি. রেজা আরো জানিয়েছেন, বিটিআরসি ইতিমধ্যেই সব অপারেটরের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছে যে তারা কোনভাবেই গ্রাহকদের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করবে না।

মার্চের শুরুতে সিম নিবন্ধনের জন্য আঙুলের ছাপ দেয়ার বাধ্যবাধকতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিলেন খায়রুল হাসান সরকার নামে এক ব্যক্তি।
এরপর ১৪ই মার্চ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
মামলার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সিংহভাগেরই মালিকানা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের।
ফলে একজন ব্যবহারকারী তথ্য সরকারকে না দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে দিচ্ছেন।
কিন্তু এই রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার মুক্তাদির রহমান জানিয়েছেন, রায়ের লিখিত কপি হাতে পাবার আগে কোন মন্তব্য করবেন না তারা।
“আশা করছি আগামী দুতিন দিনের মধ্যে আমরা ড্রাফট হলেও রায়ের লিখিত একটি ভার্সন হাতে পাবো। সেটি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করাটা আমাদের জন্য অনুচিত হবে।”
এদিকে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্নের আর মাত্র আঠারো দিন বাকি।
এই সময়ের মধ্যে কি অপারেটররা পারবেন সব সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে?
গ্রাহক সংখ্যার বিচারে দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণ ফোনের চিফ কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত দুই কোটি নব্বই লাখ সিম রেজিস্ট্রেশন করতে সমর্থ হয়েছে।
“আদালতে রিট দায়ের হবার পর থেকে সিম রেজিস্ট্রেশনের গতি কিছুটা কমে যায়। কিন্তু রায়ের পর সেটি আবার গতি পাবে বলে আশা করছি। গ্রাহকেরা যদি সেভাবে এগিয়ে আসেন, তাহলে ৩০শে এপ্রিলের মধ্যেই কাজটি শেষ করা সম্ভব।”
মি. হোসেন বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি সব সিম নিবন্ধন না করা যায়, তাহলে সরকারের পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করবেন তারা, এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে প্রতিষ্ঠানটি।