আচ্ছা, কাউকে অনেকটা মুসলিম মুসলিম দেখাচ্ছে – এটা বলতে ঠিক কী বোঝায়? মুসলিম বলতেই কি মানুষ ধরে নেয় তাকে কোনও এক বিশেষ ধরনের পোশাক বা সাজসজ্জায় দেখা যাবে?
মুসলিম শব্দটার সঙ্গেই যে এক ধরনের ‘স্টিরিওটাইপিং’ জড়িত, তাকে চ্যালেঞ্জ করতেই নেদারল্যান্ডসের রটারডম শহরে এক অভিনব চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
এলাকার মুসলিম ও অমুসলিম লোকজন নিজেদের মধ্যে পোশাক বদলাবদলি করে এই প্রদর্শনীর জন্য ছবি তুলেছেন আর সেই ছবিই তুলে ধরা হয়েছে এই ফোটোগ্রাফি প্রোজেক্টে।
কেন এই উদ্যোগ, আর তা কেমন সাড়া ফেলছে বিবিসি তারই অনুসন্ধান করেছিল সরেজমিনে।
আসলে মুসলিম বলতেই আপনার চোখে কী ধরনের ছবি ভেসে ওঠে? একজন ফ্যাশনদুরস্ত, না কি রক্ষণশীল লোকের ছবি?
কী মনে হয় লোকটা কি বন্ধুর মতো হবে, না কি তার কাছে ঘেঁষাই যাবে না? লোকটা কি মজার হবে, না কি খুব সিরিয়াস গোছের?
‘হিপস্টার মুসলিম ফোটো প্রোজেক্ট’ নামে নেদারল্যান্ডসে এই অভিনব উদ্যোগে যারা সামিল হয়েছেন – এবং স্থানীয় মহল্লার যে মুসলিম ও অমুসলিমরা নিজেদের মধ্যে পোশাক পাল্টে ছবি তুলিয়েছেন তারা নিজেরাই মানেন ওপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর আসলে খুব জটিল।
আয়টাচ একজন ডিজাইনার, তার প্রতিবেশী শরিফ থিয়েটারের পরিচালক। তারা যেমন এই প্রদর্শনীর জন্য বদলে নিয়েছেন নিজেদের পোশাক। তাদের প্রত্যেককে অন্যজনের পোশাকে কেমন লাগবে, দেখা যাচ্ছে এখানে।
ইয়াসিন মুসলিম, তার বন্ধু রাবি নন – কিন্তু তারা দুজনেই ড্যান্সার বা নৃত্যশিল্পী। প্রোজেক্টের জন্য তারাও হাজির একে অন্যের বেশে।
এই প্রদর্শনীটি যার হাতে তৈরি, তিনি শিরিন মিরাচর। তিনি বলছিলেন, “আমি হলাম অর্ধেক ডাচ, অর্ধেক ইরাকী-কুর্দি। আমি বেড়ে উঠেছি ওই দুই জগৎ মিশিয়েই।”
“আমাদের এই প্রোজেক্টে আমরা প্রথম ফোকাসটা রেখেছি দাড়ির ওপর – কারণ যদিও মুসলিম বা অমুসলিমদের একই রকম দাড়ি ওঠে, কিন্তু সাধারণ মানুষের আলোচনায় দুটোকে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখা হয়।”
“আবার ধরুন হিপস্টার বলতে যেমন প্রগতিশীল, আধুনিক ও ফ্যাশনেবল ধরে নেওয়া হয় – মুসলিম বলতেই কিন্তু তার সম্পর্কে বেশ কিছু নেতিবাচক ধারণা জড়িয়ে ফেলা হয়। তাদের লেবেল করা হয় রক্ষণশীল, আগ্রাসী হিসেবে – এমন কী ধরে নেওয়া হয় হয়তো তারা জঙ্গীবাদের সঙ্গেও জড়িত।”
“এই উদ্যোগটার শুরু হয়েছিল আমার এই ভাবনা থেকে যে এরা যদি নিজেদের মধ্যে পোশাক বদলে নেয়, তখন কী হবে? তাহলেও কি তাদের সম্পর্কে মানুষের ধারণা একই রকম থাকবে? না কি লোকে অন্য বেশে তাদের দেখে অন্য রকম ধারণা তৈরি করবে?”, বলেছিলেন শিরিন।
এই প্রোজেক্টে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রমাণ আকারের ছবি তুলে বিলবোর্ডে তা সেঁটে তাদের মহল্লাতেই পিকচার গ্যালারির মতো পরপর সাজানো হয়েছে।
এই প্রদর্শনীর জন্য নিজের ছবি তুলিয়েছেন আয়টাচ, তিনি এর মধ্যেই কিন্তু বুঝতে পারছেন এই উদ্যোগের ফল মিলতে শুরু করেছে।
তার কথায়, “মানুষ কিন্তু খুব ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে আর এই প্রোজেক্টটার কথা জেনে তাদের প্রতিক্রিয়াও খুব ভাল। আমার তো মনে হচ্ছে এর মাধ্যমে অবশেষে আমার মতো মানুষজন একটা কন্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছে।”
“অনেক সময়ই আমার সঙ্গে এমন হয়েছে যে কেউ আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়েছে যেটা আমার ভাল লাগেনি, তখন আমিও পাল্টা তার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছি যেটা আবার তার পছন্দ হয়নি। কিন্তু কেন আমরা পরস্পরের দিকে ওভাবে তাকাব? শুধু চাই আমাদের মধ্যে দশ সেকেন্ডের একটা সংলাপ, তাহলেই কিন্তু সব ভুল ভেঙে যায়!”
‘হিপস্টার মুসলিম ফোটো প্রোজেক্ট’ এ ধরনেরই এক দারুণ সফল এক সংলাপ।
রটারডামে বিপুল সাফল্য মেলার পর এই প্রদর্শনী আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাড়ি দেব বেলজিয়ামের গেন্ট শহরে – আর সেখানেও মুসলিমদের সম্পর্কে স্টিরিওটাইপ ভাঙতে তা সাহায্য করবে বলেই উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস।
সূত্র, বিবিসি