সিলেট প্রতিনিধিঃ অবশেষে দখলমুক্ত হয়েছে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠ। দীর্ঘদিন পর সোমবার মাঠটি পুরোপুরি দখলমুক্ত করা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব মাঠটি দখলমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঝামেলার কারণে দু’পক্ষকে (হকার ও দলিল লেখক সমিতি) মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঠটির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানি আমল থেকে সিলেট শহরে রাজনৈতিকগুলোর বড় ধরনের সমাবেশের স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল রেজিস্ট্রি মাঠ। এ মাঠে দাঁড়িয়ে দেশের অনেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতারা বক্তৃতা দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট রফিকুল হক জানান, ছাত্র থাকাকালে তিনি এ মাঠে দাঁড়িয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা শুনেছেন। সত্তরের দশকে এ মাঠ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন বলে জানান এ মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে মাঠটি সবার কাছে ঐতিহাসিক হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু, নব্বইয়ের দশক থেকে মাঠটি পর্যায়ক্রমে হকারদের দখলে চলে যায়। জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে তারা সেখানে তাদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু, কোনওভাবেই সেখান থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় মাঠটি ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে। কমে যেতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিও।
রেজিস্ট্রারি মাঠের দখল নিয়ে গত মে মাসে হকারদের সঙ্গে দলিল লেখক সমিতির বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটেরও ডাক দেয় দলিল লেখক সমিতি। এ অবস্থায় দু’পক্ষের বিরোধ মীমাংসায় উদ্যোগী হন সিলেট সিটি সরপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। মে মাসের শেষের দিকে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে ঈদের পর রেজিস্ট্রি মাঠ থেকে হকার শেডসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান কামরান। এ অনুযায়ী সোমবার মাঠ থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা তানভীর আহমদ রুবেল মাঠটি অপদখলমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের স্বাগত জানান। তবে, পুনরায় কেউ যাতে মাঠটি দখল করতে না পারে-সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
একটি সূত্র জানায়, সমঝোতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা নিজ উদ্যোগেই নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। সোমবার দুপুরে কামরান ছাড়াও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব, সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা মাঠটি পরিদর্শন করেন।