
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের পর, মৌলভীবাজারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এক নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে চার সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের হাতে সংগঠিত হওয়া বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থীর নাম প্রায় চূড়ান্ত করে মাঠে নেমে পড়েছে। এর পাশাপাশি, ইসলামী দলগুলোও জোট গঠনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ি): বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান
মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীরা বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক সাজু, এবং মরহুম ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর কন্যা ব্যারিস্টার জহরত আবিদ চৌধুরী। নাসির উদ্দিন মিঠু রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের পাশে থাকায় তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অন্যদিকে, জামায়াত এই আসনে তাদের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আমিনুল ইসলামকে প্রায় চূড়ান্ত করেছে, যিনি ঢাকার শেরেবাংলা থানার সাবেক আমির। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মাওলানা বদরুল ইসলাম ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমেদও প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় বিএনপির প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তবে ইসলামী জোট গঠিত হলে তা বিএনপির জন্য কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারে। বড়লেখা এবং জুড়ি উপজেলা জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া): হেভিওয়েট প্রার্থীদের লড়াই
কুলাউড়া আসনটি বরাবরই হেভিওয়েট প্রার্থীদের লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজেই প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই আসনে বিএনপি সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, এবং এখানে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী, এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একাধিক নেতা। এম এম শাহীন ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো জনপ্রিয় কিন্তু বিতর্কিত প্রার্থীদের অনুপস্থিতিতে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী শাহ মাসুকুর রশীদ তারুণ্য এবং বাগ্মিতার কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। তার পাশাপাশি, ফুলতলীর পীর সাহেবের সংগঠন আনজুমানে আল-ইসলাহ থেকে মাওলানা কাজী ফজলুল হক খান সাহেদও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই আসনে জামায়াত, বিএনপি এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর): সাইফুর রহমানের উত্তরাধিকার
মৌলভীবাজার-৩ আসনটি সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কারণে হেভিওয়েট আসন হিসেবে পরিচিত। এই আসনে বিএনপি থেকে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি এম নাসের রহমান একমাত্র শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া উন্নয়ন কার্যক্রম এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমানের মনোনয়ন প্রত্যাশা থাকলেও, তার স্থানীয় জনপ্রিয়তা কম হওয়ায় তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ বেলালও প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। এই আসনে মরহুম সাইফুর রহমানের সঙ্গে ফুলতলী পীরের ভালো সম্পর্ক থাকায় বিএনপির প্রার্থীর ফুলতলী পীরের সমর্থকদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ): চা জনগোষ্ঠীর ভোট
মৌলভীবাজার-৪ আসনটি চা বাগান অধ্যুষিত এবং চা শ্রমিক ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভোটারদের আধিপত্যের কারণে স্বতন্ত্র। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব) এবং শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু। তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ চা জনগোষ্ঠীর সমর্থন টানতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাড. মোহাম্মদ আব্দুর রব একজন শক্তিশালী প্রার্থী। এনসিপি থেকে প্রীতম দাশ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে নুরে আলম হামিদীও প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এই আসনটির ফলাফল মূলত চা জনগোষ্ঠীর ভোটের ওপর নির্ভরশীল। ইসলামী জোট গঠিত হলে তা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।











