বাবা তুর্কি শব্দ, আব্বা আরবি আর বাপ হিন্দি। তৎসম বপ্র থেকে বাপ শব্দের উৎপত্তি। বাপ শব্দটির আরও ভিন্ন অর্থও অভিধানে পাওয়া যায়ঃবপন গর্ভধান এবং মুন্ডন। অর্থাৎ জমিনে বীজ বোনা কিংবা যে বীজ বপন করে।তাই জন্মদানকারী অর্থে বাপ শব্দটি লক্ষ্যভেদী।
বাবা- তা যে ভাষায় বা যে উচ্চারণেই হোক -এক বিস্ময়কর শব্দ।
বহুমাত্রিক চেতনা- প্রকাশক এই সম্বোধন পদ-বাবা।জন্মদাতার কৃতী তো তার আছেই-বাবা ব্যাক্তিত্বে হিমালয়,স্নেহে অতলান্তিক সমুদ্র, আদর সোহাগে অসীম আকাশ,বিপদে আপদে দুর্ভেদ্য ব্যূহ আর বেপথু হলে,নিষেধে-শাসনে রাজদণ্ডকারী বিচারক। শিশুর কাছে বাবা স্নেহের সাগর,আকাশ-ছোঁয়া আদরের প্রতীক,সুবিশাল জ্ঞান -ভান্ডার,বিপদে অভয়াশ্রম। বাবা শ্রদ্ধার,বাবা সম্মানের,বাবা আদর সোহাগের,বাবা আস্থা ও বিশ্বাসের।বাবা মায়া এবং ছায়া,বাবা অভিভাবক ও নির্দেশক, বাবা শাসক এবং ত্রাতা,বাবা বিশ্বাস ও আশ্রয়।
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে খারাপ মানুষ অনেক আছে,কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই’।
বাবা হিমালয়ের মত মহান,অটল ব্যক্তিত্বশালী আবার আকাশের মত উদার,সমুদ্রের মত কল্লোলময় -কখনও ব্রজের মত কঠোরও।বাবা কখনও ঋষির মত পথনির্দেশক, শিক্ষকের মত উপদেশদাতা,কখনও বন্ধুর মত সহচর।সময় এবং অবস্থাভেদে যে রুপেই তিনি সন্তানের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী। সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের পথে বাবা যেন অলৌকিক আলোক বর্তিকা। দুগ্ধপোষ্যতা থেকে সন্তান যখন বড় হতে থাকে তখন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাবার প্রতি আকর্ষণ। মায়ের আঁচল মুক্ত পৃথিবীতে বাবাই সন্তানের প্রথম ও প্রধান কর্ণধার। প্রণম্য পিতা তখন সশ্রদ্ধ বন্ধুতে পরিণত হতে থাকেন। পিতার কাছে সন্তান জীবন্ত আত্মপ্রতিকৃতি আর সন্তানের কাছে পিতা জীবনের উজ্জ্বলতম বাতিঘর ও প্রবীণ বটের শ্যামল ছাঁয়া।
সুনীল বঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন – ” শিল্প সাহিত্যে মায়ের স্থান যতখানি জুড়ে আছে, সেই তুলনায় বাবা একেবারে কোনঠাসা। অনেক সময় বাবার কোনো উল্লেখই থাকে না।……………… তিনি জন্মদাতা হয়েও থাকে একটু আড়ালে…… তাঁর স্নেহের অভিব্যক্তি চাক্ষুষ দেখা না-গেলেও অদৃশ্যভাবে ঘিরে থাকে সন্তানকে।
লেখকঃ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি।