মাসুম বিল্লাহ, ঢাকা থেকেঃ সুবিন্যস্ত পরিবেশ, ধুলোর উড়োউড়িও কমেছে অনেকটা; দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অমর একুশে বই মেলায় পাঠকের আগাগোনাও বাড়তে শুরু করেছে।
সোমবার বিকালে বই মেলায় ঘুরে পাঠকের উপস্থিতি বাড়ার চিত্র দেখা যায়। পাঠকরা নতুন বইয়ের ধারে ঘুরছেন, উল্টে-পাল্টে দেখে কিনছেনও তারা।
পাঠক বাড়ার ফলে খুশির ঝিলিক প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের মুখে; এবারের মেলায় বেশি মানুষের উপস্থিতির ইঙ্গিত ‘দেখছেন’ তারা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মেলার ভেতরে নিজেদের মতো ঘুরতে আর ছবি তুলতে দেখা যায় ঢাকা সিটি কলেজের তিন ছাত্রীকে। নানা ফুলের বাহারি ব্যান্ড পরা ছিলেন তিনজনই।
তাদের একজন তামান্না খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, বই দেখার পাশাপাশি বিকালে ঘুরে বেড়ানোও তাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য। প্রতিজন দুই-তিনটা করে বইও কিনেছেন তারা।
“গত কয়েক বছর ধরে বই মেলায় আসি। প্রথম দিকে ভিড়-ভাট্টা কম থাকে। বই কেনার পাশাপাশি ঘুরেও শান্তি।”
তাদের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে কথা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহানের সঙ্গে।
বেশ কিছু বই কিনে আপন মনেই মেলায় ঘুরে ফিরছিলেন তিনি। এরপরও বইয়ের স্টলগুলোতে ঢুঁ মারছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “শুরুর দিকে অত বেশি ভিড় নাই এখন। স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, বেই কেনা যাচ্ছে। দিন গড়ালে মানুষের উপস্থিতিতে হাঁটাচলায় একটু কষ্ট হয়। সে কারণে প্রথম দিকেই মেলায় চলে এসেছি।”
অন্যান্য বারের সঙ্গে এবারের মেলার তারতম্য তুলে ধরে অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, “প্রতিবারই মেলায় আসা হয়। এবার স্পেসটা একটু বড় মনে হচ্ছে। পরিবেশ সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের হবে বলে মনে হয়।”
পাঠকের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় এবারের বই মেলা জমবে বলে আশার কথা শোনালেন উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলার চতুর্থ দিন খুব বেশি না হলেও পাঠকেরা আসতে শুরু করেছেন। পাঠকের এমন উপস্থিতি খুবই ইতিবাচক। আশা করা যায়, এবারের বই মেলায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।”
কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ কে নাছির আহমেদ সেলিম একই সুরে বললেন, “পাঠক আসছেন, বিক্রিও বাড়ছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে মেলার যে প্রবেশপথটি রয়েছে, সেটি দৃশ্যমান করা গেলে পাঠকের আগমন আরও বাড়বে।”
পূর্বনির্ধারিত সময় সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বই মেলার ফটক খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থী ও পাঠকদের জন্য। এদিন মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী ’শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নূহ-উল-আলম লেনিন।
এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক আলোচনায় অংশ নেন।
মূলমঞ্চের সাংস্কৃতিক আয়োজনে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ।
কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান ও ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
চতুর্থ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪১টি।