গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ পাস করা হয়েছে । আমি মনে করি , এই বিল বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপ । মানুষের সামাজিক পরিবর্তন – পরিবর্ধন ও জীবন চলার পথকে সুন্দর ও সুগম করার জন্য এবং সময়ের পরিক্রমায় জনবান্দব সরকার জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য , মানুষের কল্যাণের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ” সরকার সব সময়ই জনগনের নিরাপত্তা , জন জীবনে প্রশান্তি , জন কল্যাণ বিধান , দেশের শান্তি রক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্টায় সহায়ক ভূমিকা পালন করার অঙ্গীকারে দায়বদ্ধ” ।তাই সময়ের প্রেক্ষিতে তথ্য প্রযুক্তি অপপ্রয়োগ যেন না হয় , অপ-তথ্য প্রয়োগ করে অপরাধিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের জনজীবনকে যাতে কলুষিত করতে না পারে এই চিন্তা মাথায় রেখেই তথ্য প্রযুক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করা হয়েছে । এই আইনের সুবিধা-অসুবিধার কিছু দিক বিশ্লেষণ করার জন্যই আমার আজকের এ সমীক্ষা ।
আমরা জানি , ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইসতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন । তখন থেকেই আমরা ডিজিটাল শব্দটির সাথে পরিচিত হই । এরপর গত ১০ বৎসরে শেখ হাসিনা সরকার বাস্তবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনেক দূর এগিয়ে গেছে । আজ বাংলাদেশের ৯ কোটির মত লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে , ১৫ কোটির মত মোবাইল সিম ব্যবহার করছে , ৫ কোটি লোক ফেসবুক ব্যবহার করছে এবং যুব সমাজ IT ব্যবহার করে স্বনির্ভর হয়ে বিভিন্ন ভাবে অর্থ উপার্জন করে দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে । এই ডিজিটাল জগতে পৌঁছে সুবিধা ভোগের পাশাপাশি তথ্য গুজব বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনজীবনে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দমনের উদ্দ্যেশেই ডিজিটাল আইন পাশ করা হয়েছে ।
এই ডিজিটাল আইন অপব্যবহার ও গুজবের ফলে বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন যুদ্বাপরাধী মাওলানা সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে , তা মাইকে ও ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় , কোটা বিরোধী আন্দোলনের একজন ছাত্রকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে ডিজিটাল গুজব প্রচার করে ভয়াবহ নাশকতা করা হয় , আওয়ামী লীগ অফিসে ছাত্রলীগের হাতে স্কুল ছাত্রীরা নির্যাতিত হয় , নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে , মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে – এসব বিভন্ন ডিজিটাল গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে জনজীবনে অরাজগতা ও বিশৃঙ্খলা করে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে গুজব কারীরা ।
সুতরাং ডিজিটাল গুজব ছড়িয়ে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হোক, রাষ্ট্র এবং জনজীবনে অরাজগতা বিরাজ করুক তা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের নয় – কোন সরকারই তা মেনে নেবেনা ।
তাই এসব ডিজিটাল গুজব প্রতিরোধের জন্যই ” ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” প্রণয়ন প্রয়োজন হয়ে পড়ে । কিন্তু সাংবদিক সমাজ মনে করছে এ আইনের কিছু ধারা পরিবর্তন বা সংশোধন না করলে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতায় বাধা হয়ে যাবে , অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে ভিডিওতে চিত্র ধারনে ধারণে পুলিশ যে কোন মূহুর্তে তাদের গ্রেফতার করে নাজেহাল ও চ্যালেজ্ঞ করতে পারে – এমনকি পথচারীদের মোবাইল চেক করে আপত্তিকর কিছু পেলে তাদেরও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে নাজেহাল করতে পারবে এবং অনলাইন পোর্টালে যারা কাজ করছে তাদের বেলায়ও রয়েছে বিপত্তি ।
এসব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ঢাকায় ” সাংবাদিক পরিষদ ” ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু কিছু ধারা পরিবর্তনের জন্য একাদিকবার মিটিং করেছেন বাংলাদেশ সরকারের আইন ও তথ্য মন্ত্রীর সাথে ।সাংবাদিক পরিষদ মনে করছে , এ আইন নৈতিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি এবং তথ্য আইনের সাথে সাংঘর্ষিক , এ আইন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করছে , নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা প্রকাশের বাধা , পুলিশকে নিচক সন্দেহের কারণে এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেওয়া , অভিযোগ যাচাই না করেই আমলে নেওয়া ও জামিন অযোগ্য ইত্যাদি ইত্যাদি কারণ গুলো সংবাদ পত্রের ও সাংবাদিকদের হুমকি হয়ে দাড়াবে বলে সাংবাদিকরা মনে করছেন ।
কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যপারে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের অভয় দিয়ে বার বারই বলেছেন , বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন ও সৎ সাংবাদিকতায় দেশের কল্যাণ কাজে নিয়মিত সংবাদ লিখে যেসব সাংবাদিকরা এ আইন তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবেনা । আইন ও তথ্য মন্ত্রীরাও আশ্বাস দিয়ে সাংবাদিক পরিষদকে বলেছেন , আলোচনার মাধ্যমে এ আইনের কিছু ধারা পরিবর্তন করবেন ।
আমি মনে করি , সরকারের সাথে সাংবাদিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ আলোচনার মাধ্যমে এ আইনের ভুল বুঝাবুঝির সুরাহা হয়ে সাংবাদিক পরিষদের উৎকন্ঠার অবসান হবে কারণ সরকার যেমন জনমনে প্রশান্তি নিরাপত্তা বিধান করতে চায় ঠিক তেমনি জাতির বিবেক ও দর্পণ হিসাবে বিবেচিত সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মিরাও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির জন্য অতন্ত্র প্রহরীর মত দেশের গণতন্ত্র সুমজ্জিত রক্ষায় কাজ করে সব সময় সাংবাদিকদের মর্যাদা উর্ধ্বে রেখেছে । কাজেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের সাথে সাংবাদিকদের মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু না হয়ে সুষ্ঠু আলোচনাই এ পথকে সুগম করে সাংবাদিকদের উৎকন্ঠার অবসান হবে বলে আমার বিশ্বাস। এবং তা হতে হবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অনুমোদনের পূর্বে, কারণ তিনি সই করার পরই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি আইনে পরিণত হবে।
আব্দুর রউফ মাওলা
সম্পাদক, মাসিক মরুলেখা -কুয়েত
সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম ( IMF ) কুয়েত