গড়ে তোলে প্রতিরোধ, ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়, মুখেও খাওয়ানো হয়। যেমনঃ পোলিও রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা মুখে খাওয়ানো হয়।হেপাটাইটিস বা জন্ডিস, হুপিং কফের টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়।পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক রোগের টিকার আবিষ্কার হয়েছে। আরো অনেক রোগের টিকা আবিষ্কার হতে বাকি।
প্রকৃতিতে চাদর মুড়ি দিয়ে এসে গেছে শীত। শীতকালে ঠান্ডাজনিত সমস্যা গুলো অনেক বেড়ে যায়। সর্দি, হাচি, কাশি অনেক সময় মানুষকে দূর্বল করে তোলে। শ্বসনতন্ত্রের নীচের অংশতে রোগ জীবানুর আক্রমন হলে, মানুষের সর্দি, হাচি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা থাকে।
বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এই সমস্যা গুলোর জন্য দায়ী। ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষুদ্র অণুজীব। যা খালি চোখে দেখা যায় না। শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে ভাইরাস কে দেখা সম্ভব। সামান্য সর্দি, হাচি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব, মাথা ব্যথা দীর্ঘ স্থায়ী হলে, তা হয়ে ওঠে কষ্টের।
এই সমস্যাগুলোর জন্য কাজ করে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। ভাইরাস মানুষের দেহের কোষের থেকেও অনেক গুণ ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র অণুজীব আমাদের দেহের কোষে প্রবেশ করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে, কোষের মধ্যে বাসা বাধে।
কোষের ভেতরের সকল উপাদানকে দূর্বল করে দেয়। একটি ভাইরাস তখন মানবদেহের একটি কোষের মধ্যে তৈরী করে অসংখ্য ভাইরাস।
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যতো দূর্বল হবে , ভাইরাসের কার্যক্রম তত বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শক্তিশালী ভাইরাস তৈরী করবে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু। দূর্বল লাগা, ক্লান্তি, অবসাদ এর জন্যও দায়ী কিছু ভাইরাস। যারা মানুষের কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এক অসংখ্য ভাইরাস একত্রিত হয়ে তৈরী করে ইনফেকশন।
শীতকালে ধূলো বালির সাথে , বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমন বেড়ে যায়। রৌদ্রের তেজ কমে আসে। রৌদ্র ধ্বংস করে দেয় অনেক রোগ জীবাণু।
শীতকালে রৌদ্রের তাপের অভাবে, পুষ্টিকর খাবার ও শারীরিক ভাবে দূর্বল মানুষেরা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন ধরনের অসুখে।
বৈজ্ঞানীকরা দীর্ঘ বছর থেকে গবেষনা করেছেন, শীতকালের ঠান্ডা জনিত কষ্টগুলোর বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার করার জন্য। এখন পর্যন্ত গবেষণা করেই চলেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কৃত হয় ১৭৯৬ সালে। ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার আবিষ্কার করেন এই টিকা। এবং বৈজ্ঞানিক লুই পাস্তুর পরবর্তীতে এই টিকা নিয়ে কাজ করেন।
পৃথিবীতে প্রথম টিকা ছিল গুটি বসন্তের বিরুদ্ধে। বৈজ্ঞানিকরা সফলভাবে গুটি বসন্তকে নির্মূল করতে পেরেছেন।
গুটি বসন্ত নির্মুল হবার পর হুপিং কাশি, টিটেনাস, ডিপথেরিয়া সহ আরো অনেক রোগের টিকা আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু সামান্য ঠান্ডা, সর্দি, কাশি জনিত সমস্যার বিরুদ্ধে এখন ও টিকা আবিষ্কার হয়নি।
ঠান্ডাজনিত কষ্টগুলোর বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলক টিকার উপর সবশেষ রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল ১৯৭৫ সালে।
ঠান্ডাজনিত এই সমস্যাগুলোর সাথে জড়িত থাকে একই সাথে অসংখ্য ভাইরাস। এই অগণিত সংখ্যার ভাইরাসগুলো আবিষ্কার হতে সময় লাগবে। অনেকগুলো সমস্যার ভাইরাস সনাক্ত হলেও টিকা এখন ও আবিষ্কার হয়নি। গবেষনা চলছে।
কোন ভাইরাস গলা ব্যথা তৈরী করে। কোন ভাইরাস নাক বন্ধ হতে সাহায্য করে। কিছু ভাইরাস জ্বর আসতে কাজ করে।
গুটি বসন্ত , হেপাটাইটিস, পোলিও এই ধরনের অসুখ গুলোর দায়ী হলো শুধুমাত্র সেই অসুখ তৈরী কারী ভাইরাস। কিন্তু ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর জ্বর এর জন্য দায়ী একই সঙ্গে অসংখ্য ভাইরাস ।
এই জন্য টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরী হতে সময় লাগছে।
আমেরিকার উইশকনসিন ইউনিভার্সিটির অ্যাজমা ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা গুলোর চিকিৎসক জেমস জার্ন বলেন, “ঠান্ডা লাগার সময় আমাদের নাক বন্ধ হয়ে যায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
এই সময় আমাদের নাকে রাইনো নামে একধরনের ভাইরাসের কিছু প্রজাতি বাসা বাধে। এই ভাইরাসের গুলো সঠিক সময়ে ধ্বংস না হলে ফুসফুসে বাসা বাধে।
পরিনামে তৈরী করে নিউমেনিয়া সহ নানাবিধ জটিলতা। ”
চিকিৎসক জেমস জার্ন রাইনো ভাইরাসের কথা বলেছেন। যা নাক বন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী । কিন্তু আরো অসংখ্য ভাইরাস রয়েছে। যা গবেষণার কাজে বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসা ও ওষুধ কোম্পানি গুলো প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করেই চলেছেন।
বৈজ্ঞানিকেরা আশাবাদী, অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। রাইনো ভাইরাস আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য ভাইরাসগুলোর টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হবেই।
এই বিষয়ে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক উইন্ডি বার্কলে বলেন- “ আমরা সকল ভাইরাস সমুহকে কখনো সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করতে পারবো না। কিন্তু তাদের সম্পর্কে ভালভাবে বুঝে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য নতুন টিকা, ভাইরাস বিরোধী উপাদান, যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারি। তাহলে তাদের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে আনা সম্ভব। ”
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্-স্কয়ার হাসপাতাল),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল (অনগোয়িং)
উপস্থাপিকাঃ ‘প্রবাসীর ডাক্তার’ বাংলাটিভিতে প্রচারিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
সম্পাদকঃ (কুয়েত বাংলা নিউজ ডটকম) www.kuwaitbanglanews.com
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকঃ অগ্রদৃষ্টি নিউজ পোর্টাল