Menu |||

এম এ জি ওসমানী, মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার? সিরাজী এম আর মোস্তাক

সিরাজী এম আর মোস্তাকঃ  বাংলাদেশে প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় দুই লাখ যোদ্ধা এবং একচল্লিশ বীরাঙ্গনার যে তালিকা রয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নাম নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ৬৭৬ জন যোদ্ধাকে খেতাব দিয়েছিলেন, তাতেও তার নাম নেই। অর্থাৎ তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। তাহলে কি তিনি রাজাকার? কখনো নয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম নেই কেন?
জনাব ওসমানী ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বৃটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চাকুরী করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই ছিলেন সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সকল সেক্টর এবং বাহিনী সমূহ তার অধীনে ছিল। এদেশের সাড়ে সাত কোটি সংগ্রামী জনতা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সর্বাত্মক লড়াই করেন এবং লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিজয় ছিনে আনেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ৬৭৬ জন যোদ্ধাকে খেতাব দিয়ে অবশিষ্ট সকল জনতা, শহীদ, বন্দী ও আত্মত্যাগী নির্বিশেষে ‘৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকেই ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ ঘোষণা করেন। একজন বন্দী যোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধু নিজেও ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন। এ আদর্শ অনুসারে জনাব ওসমানীও বঙ্গবন্ধুর ন্যায় ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন।
বর্তমানে সে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চরমভাবে বিকৃত হয়েছে। প্রায় দুই লাখ যোদ্ধা ও একচল্লিশ নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। তারা এবং তাদের পরিবার-পরিজন মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধার নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদে অবৈধ প্রাধান্য পেয়েছে। যেন শুধু তারাই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। অন্য সবাই রাজাকার। খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানিও মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং রাজাকার। এভাবে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনও মুক্তিযোদ্ধা নয়। যে হাজার হাজার ভারতীয় সেনাসদস্য সশস্ত্র সংগ্রাম ও প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাক হানাদারমুক্ত করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা নয়। লাখ লাখ বন্দী ও শরণার্থীও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বহির্ভুত। অর্থাৎ তালিকাবিহীন সবাই রাজাকার।
মূলত ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি যেমন মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি রাজাকার। কেউ পাকিস্তানি রাজাকার, কেউ ভারতীয় রাজাকার। যারা পাকিস্তানের সহায়তা পেয়েছে, তারা পাকিস্তানি রাজাকার। আর যারা ভারতের সহায়তা পেয়েছে, তারা ভারতীয রাজাকার। যুদ্ধকালে দেশে অবস্থানকারী সকল জনতাই পাকিস্তানি রাজাকার। আর ভারতে অবস্থানকারী সকল নেতৃবৃন্দ, তথায় প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী এবং শরণার্থীগণ ভারতীয় রাজাকার। যেহেতু জনাব এম এ জি ওসমানী ভারতের সহযোগীতায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং বাংলাদেশে প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম নেই, তাই তিনিও ভারতীয় রাজাকার।
্এ রাজাকারি চেতনা মুক্তিযুদ্ধেই শুরু হয়েছিল। ২৪ মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু ও পাকিস্তান সামরিক সরকারের সমঝোতা বৈঠক ব্যর্থ হলে যুদ্ধের আবহ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের আত্মগোপনে বা ভারতে যাবার নির্দেশ দেন। তাজউদ্দিন আহমদসহ প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকেও আত্মগোপনের পরামর্শ দেন। বঙ্গবন্ধু তা উপেক্ষা করে জবাব দেন, ‘তোমরা পালাও কিন্তু আমি নয়। আমি পালালে, পাকবাহিনী শুধু আমাকে বা শেখ মুজিবকে খোঁজার নামে বাংলার সাধারণ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করবে। তাই বাংলার মানুষের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করছি।’ এভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মী ড. কামাল হোসেনসহ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে অবরূদ্ধ হন। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারি চেতনা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, “রাজাকার এ অভিধাটি ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে হায়দারাবাদে ভারতীয়দের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিজামের স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যবহার করেছিল।” (ফজলুল কাদের কাদরী, বাংলাদেশ জেনোসাইড এন্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস, পৃষ্ঠা-১৩২, বাংলা অনুবাদ-দাউদ হোসেন)।
বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জনাব এম এ জি ওসমানী দেশের সাড়ে সাত কোটি জনতাকে গেরিলা বাহিনীর সদস্যভুক্ত করেন। তিনি এগারটি সেক্টরসহ অসংখ্য বাহিনী গড়ে তোলেন এবং সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেন। যুদ্ধকালে পাকবাহিনী কোনো এলাকায় আক্রমণ করলে দেশে অবস্থানরত সংগ্রামী জনতা গেরিলা কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে সামনে এগিয়ে আসেন। পাকবাহিনীকে আশ্বস্ত করেন, তদীয় এলাকায় পাকিস্তান বিরোধী কেউ নেই। তারা দিনে পাকবাহিনীকে সহযোগীতা করেন, আর রাতে তাদেরই বিরূদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তারা অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রাণরক্ষাসহ মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও জনাব এম এ জি ওসমানীর আদর্শে উজ্জীবিত এক একজন বীর সেনা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন তাদেরই অন্তর্গত। তারা যুদ্ধকালে ভারতপ্রবাসী তথা প্রশিক্ষণের নামে সেখানে অবস্থানকারীদের তুলনায় মুক্তিযুদ্ধে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর বিশেষ ক্যু’য়ের ফলে দেশীয় যোদ্ধাগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বঞ্চিত হয়ে ‘পাকিস্তানী রাজাকার’ সাব্যস্ত হন আর ভারতীয় রাজাকারগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃত হন। বঙ্গবন্ধু এবং এম এ জি ওসমানী উক্ত মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বঞ্চিতদের দলভুক্ত।
তাই, যতদিন প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু এবং এম এ জি ওসমানীসহ ত্রিশ লাখ শহীদ ও ৭১’এর প্রকৃত যোদ্ধাগণ রাজাকার বিবেচিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা ইতিহাস রচিত হবে। শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক হবে। জাতি আরো বিভক্ত হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এজন্য উচিত, বঙ্গবন্ধু ও এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা। তাদের ন্যায় ‘৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকেও মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা। ত্রিশ লাখ শহীদ, সকল বন্দী ও শরণার্থীদেরকেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া। প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা। দেশের প্রতিটি নাগরিককে ‘৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা।
অতএব, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর কাছে সশ্রদ্ধ জিজ্ঞাসা, প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসারে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জনাব এম এ জি ওসমানি মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার?

এ্যাডভোকেট, ঢাকা।
mrmostak786@gmail.com.

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
মন্ত্রীরা কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

এম এ জি ওসমানী, মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার? সিরাজী এম আর মোস্তাক

সিরাজী এম আর মোস্তাকঃ  বাংলাদেশে প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় দুই লাখ যোদ্ধা এবং একচল্লিশ বীরাঙ্গনার যে তালিকা রয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নাম নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ৬৭৬ জন যোদ্ধাকে খেতাব দিয়েছিলেন, তাতেও তার নাম নেই। অর্থাৎ তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। তাহলে কি তিনি রাজাকার? কখনো নয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম নেই কেন?
জনাব ওসমানী ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বৃটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চাকুরী করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই ছিলেন সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সকল সেক্টর এবং বাহিনী সমূহ তার অধীনে ছিল। এদেশের সাড়ে সাত কোটি সংগ্রামী জনতা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সর্বাত্মক লড়াই করেন এবং লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিজয় ছিনে আনেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে ৬৭৬ জন যোদ্ধাকে খেতাব দিয়ে অবশিষ্ট সকল জনতা, শহীদ, বন্দী ও আত্মত্যাগী নির্বিশেষে ‘৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকেই ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ ঘোষণা করেন। একজন বন্দী যোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধু নিজেও ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন। এ আদর্শ অনুসারে জনাব ওসমানীও বঙ্গবন্ধুর ন্যায় ‘সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন।
বর্তমানে সে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চরমভাবে বিকৃত হয়েছে। প্রায় দুই লাখ যোদ্ধা ও একচল্লিশ নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। তারা এবং তাদের পরিবার-পরিজন মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধার নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদে অবৈধ প্রাধান্য পেয়েছে। যেন শুধু তারাই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। অন্য সবাই রাজাকার। খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানিও মুক্তিযোদ্ধা নয়, বরং রাজাকার। এভাবে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনও মুক্তিযোদ্ধা নয়। যে হাজার হাজার ভারতীয় সেনাসদস্য সশস্ত্র সংগ্রাম ও প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাক হানাদারমুক্ত করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা নয়। লাখ লাখ বন্দী ও শরণার্থীও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা বহির্ভুত। অর্থাৎ তালিকাবিহীন সবাই রাজাকার।
মূলত ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি যেমন মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি রাজাকার। কেউ পাকিস্তানি রাজাকার, কেউ ভারতীয় রাজাকার। যারা পাকিস্তানের সহায়তা পেয়েছে, তারা পাকিস্তানি রাজাকার। আর যারা ভারতের সহায়তা পেয়েছে, তারা ভারতীয রাজাকার। যুদ্ধকালে দেশে অবস্থানকারী সকল জনতাই পাকিস্তানি রাজাকার। আর ভারতে অবস্থানকারী সকল নেতৃবৃন্দ, তথায় প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী এবং শরণার্থীগণ ভারতীয় রাজাকার। যেহেতু জনাব এম এ জি ওসমানী ভারতের সহযোগীতায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং বাংলাদেশে প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম নেই, তাই তিনিও ভারতীয় রাজাকার।
্এ রাজাকারি চেতনা মুক্তিযুদ্ধেই শুরু হয়েছিল। ২৪ মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু ও পাকিস্তান সামরিক সরকারের সমঝোতা বৈঠক ব্যর্থ হলে যুদ্ধের আবহ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের আত্মগোপনে বা ভারতে যাবার নির্দেশ দেন। তাজউদ্দিন আহমদসহ প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকেও আত্মগোপনের পরামর্শ দেন। বঙ্গবন্ধু তা উপেক্ষা করে জবাব দেন, ‘তোমরা পালাও কিন্তু আমি নয়। আমি পালালে, পাকবাহিনী শুধু আমাকে বা শেখ মুজিবকে খোঁজার নামে বাংলার সাধারণ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করবে। তাই বাংলার মানুষের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করছি।’ এভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মী ড. কামাল হোসেনসহ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে অবরূদ্ধ হন। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারি চেতনা শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, “রাজাকার এ অভিধাটি ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে হায়দারাবাদে ভারতীয়দের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা নিজামের স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যবহার করেছিল।” (ফজলুল কাদের কাদরী, বাংলাদেশ জেনোসাইড এন্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস, পৃষ্ঠা-১৩২, বাংলা অনুবাদ-দাউদ হোসেন)।
বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জনাব এম এ জি ওসমানী দেশের সাড়ে সাত কোটি জনতাকে গেরিলা বাহিনীর সদস্যভুক্ত করেন। তিনি এগারটি সেক্টরসহ অসংখ্য বাহিনী গড়ে তোলেন এবং সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেন। যুদ্ধকালে পাকবাহিনী কোনো এলাকায় আক্রমণ করলে দেশে অবস্থানরত সংগ্রামী জনতা গেরিলা কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে সামনে এগিয়ে আসেন। পাকবাহিনীকে আশ্বস্ত করেন, তদীয় এলাকায় পাকিস্তান বিরোধী কেউ নেই। তারা দিনে পাকবাহিনীকে সহযোগীতা করেন, আর রাতে তাদেরই বিরূদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তারা অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রাণরক্ষাসহ মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও জনাব এম এ জি ওসমানীর আদর্শে উজ্জীবিত এক একজন বীর সেনা ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন তাদেরই অন্তর্গত। তারা যুদ্ধকালে ভারতপ্রবাসী তথা প্রশিক্ষণের নামে সেখানে অবস্থানকারীদের তুলনায় মুক্তিযুদ্ধে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর বিশেষ ক্যু’য়ের ফলে দেশীয় যোদ্ধাগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বঞ্চিত হয়ে ‘পাকিস্তানী রাজাকার’ সাব্যস্ত হন আর ভারতীয় রাজাকারগণ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃত হন। বঙ্গবন্ধু এবং এম এ জি ওসমানী উক্ত মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বঞ্চিতদের দলভুক্ত।
তাই, যতদিন প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু এবং এম এ জি ওসমানীসহ ত্রিশ লাখ শহীদ ও ৭১’এর প্রকৃত যোদ্ধাগণ রাজাকার বিবেচিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা ইতিহাস রচিত হবে। শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক হবে। জাতি আরো বিভক্ত হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এজন্য উচিত, বঙ্গবন্ধু ও এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা। তাদের ন্যায় ‘৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকেও মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা। ত্রিশ লাখ শহীদ, সকল বন্দী ও শরণার্থীদেরকেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া। প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা। দেশের প্রতিটি নাগরিককে ‘৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা।
অতএব, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর কাছে সশ্রদ্ধ জিজ্ঞাসা, প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসারে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জনাব এম এ জি ওসমানি মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার?

এ্যাডভোকেট, ঢাকা।
mrmostak786@gmail.com.

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
মন্ত্রীরা কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (রাত ১১:৪২)
  • ২১শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: রবি, ২১ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।