স্পোর্টস ডেস্কঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ রোববার কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের নজর এখন এই ম্যাচের দিকে।
এই টুর্নামেন্টেরই সুপার টেন রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেভাবে ইংল্যান্ডকে ১৮২ রানের টার্গেট তাড়া করে হারিয়ে দিয়েছিল, এবারও সেরকম একটা জয়ের প্রত্যাশা করছে তারা।
তবে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মর্গান বলছেন, কাল যে ইংল্যান্ড মাঠে নামবে, সেই ইংল্যান্ড টিম হবে একেবারেই অন্যরকম। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ খেলায় তারা জিতেছে, তারপর ইংল্যান্ড এখন নতুন আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত।
২৯ বছর আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শেষবার যখন কোনও বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়, সেই ম্যাচে রিভার্স সুইপ মেরে আউট হওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক গ্যাটিংকে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই ম্যাচটা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়।
আর এখন ওয়ার্ল্ড টি টোয়েন্টির ফাইনালে আবার যখন ইংল্যান্ড ইডেনে খেলতে এসেছে, এবং সামনে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ – তখন শুধু রিভার্স সুইপ কেন, আরও নানা ঝুঁকিতে ভরা শট খেলার তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ক্রিস গেইল-সহ এমন নানা বিগ হিটার আছেন – আর ম্যাচের আগে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান স্বীকার করলেন ক্যারিবিয়ানদের মধ্যে যে একাধিক ম্যাচ উইনার আছে সেটা তাদের ভালই জানা আছে।
”গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে আমরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিলাম, তারও আগে থেকেই আমরা কিন্তু জানতাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম মানে একা ক্রিস গেইল নয়। আসলে আপনি যখনই কোনও ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলেন, সেটা কখনওই কিন্তু কোনও বিশেষ একজনের বিরুদ্ধে খেলা নয়। ভাল দলে এমন বেশ কয়েকজন থাকে যারা যে কোনওদিন একাই একটা ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। আমার মনে হয় ভারত সেটা ভালভাবেই টের পেয়েছে, সেমিফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে যারা লেন্ডল সিমন্সের ইনিংসটা দেখেছেন তারাই সেটা ভাল বুঝতে পারবেন।”
তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক এখনও পর্যন্ত ইডেনের উইকেট দেখে খুশি। তার মতে, এটা বেশ ভাল ক্রিকেটিং উইকেট – এবং তিনি যা ভেবেছিলেন তার তুলনায় কলকাতার এই পিচে যথেষ্ট ভাল ঘাসের আচ্ছাদন আছে।
অন্য দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও উইকেট দেখে অখুশি নন – এবং এই টুর্নামেন্টে তার টিম আগাগোড়া যেভাবে খেলছে তাতে তিনি অনেকটা নিশ্চিন্তও।
গোটা বিশ্বকাপে অধিনায়ক স্যামিকে মাত্র ১১ টা বল খেলতে হয়েছে আর দুওভার হাত ঘোরাতে হয়েছে – কারণ তার নিয়মিত বোলাররা আর টপ অর্ডার এতই ভাল পরিস্থিতি সামলেছেন।
তবে স্যামি পরিষ্কার বললেন, বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গত কিছুকাল ধরে যেমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় সেটা তাদের আঘাত করে এবং ফাইনালে তারা সেই গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্যই খেলবেন।
”যে দলটা বিশ্ব ক্রিকেটে টানা সতেরো বছর ধরে রাজত্ব করেছে তাদের নিয়ে এসব কথা বলা হলে খারাপ তো লাগেই। হ্যাঁ, আমাদের ক্রিকেটে অব্যবস্থাপনার কারণে, কাঠামোগত ত্রুটির কারণে দুদশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বেশ লড়াই করতে হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিককালে টিটোয়েন্টি ফর্ম্যাটে আমাদের ক্রিকেটাররা দারুণ সাফল্য পেয়েছেন – এবং তার জন্যও কিন্তু তাদের অর্থলোভী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়ে থাকে। এবং এই ফর্ম্যাটেও কেউ আমাদের প্রাপ্য সম্মানটা দেয় না – আর সমালোচনাটা অনেক সময় আসে আমাদের নিজেদের লোকেদের কাছ থেকেই।”
স্যামি আরও জানিয়েছেন ড্রেসিংরুমে ডোয়েইন ব্র্যাভো সম্প্রতি বলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা নিজেরা ছাড়া কেউ হারাতে পারবে না – এবং দল সেটা পুরোপুরি বিশ্বাস করে।
ক্রিকেট ভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের ব্রেইনে ঘাটতি আছে বলে যে মন্তব্য করেছিলেন – ফাইনালের আগে তারও কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
সোজা কথায় – ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুঝিয়ে দিয়েছে ইডেনের ফাইনালকে তারা নিছক একটা বড় ম্যাচ হিসেবে দেখছে না – দেখছে তাদের ক্রিকেট গৌরব ফিরে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবেই।
অন্য দিকে ইংল্যান্ড শিবিরও ঘোষণা করেছে তারা জানে রবিবারের ফাইনাল সাধারণ কোনও ম্যাচ নয় – দলের খেলোয়াড়রা ফেভারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে তৈরি।