আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মুসলিম নারীদের তাৎক্ষণিক তালাকের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংসদে বিল পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। লোকসভায় ওই বিল পেশ করে তিনি আজকের দিনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, তালাক নিয়ে নয়া বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি।
তিনি বলেন, সংসদে তালাক ইস্যুতে আইন তৈরি করার কোনো অধিকার নেই কারণ ওই বিলে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হরণ হবে। এটা সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
তার মতে, তাৎক্ষণিক তালাক নিয়ে সংসদে বিল পেশ করার আগে মানুষের মধ্যে ওই ইস্যুতে বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। নারীদের অধিকার রক্ষায় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় আইন থাকায় নয়া আইন আনার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ধরণের আইন আনা হলে তা মুসলিম নারীদের প্রতি অবিচার করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আসাদউদ্দিন ওয়াসি বলেন, এটা কী করে সম্ভব যে, স্বামী কারাগারে থাকবে এবং ভাতা/খোরপোশও দিতে থাকবে? দেশে ২০ লাখ এমন নারী আছেন যাদের স্বামীরা তাদের পরিত্যাগ করেছেন এবং তারা মুসলিম নন, তাদের জন্যও আইন তৈরি করা হোক।
এ প্রসঙ্গে আজ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিক তালাক বিষয়ে পার্লামেন্টে আইন এনে মুসলিমদের সম্পর্কে, শরীয়া সম্পর্কে সংযোজন করার কোনো অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারে নেই। কেননা ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। যেকোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে চলার অধিকার রাখে এবং সংবিধান সেই অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে। তা সত্ত্বেও কেবল সামান্য সংখ্যক তালাকপ্রাপ্ত নারীদের নিয়ে পার্লামেন্টে আজ যে বিল পেশ করা হলো, ওই বিলের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই এবং তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কোনো পুরুষ মানুষ তাৎক্ষণিক তালাক দিলে তাকে যদি কারাগারে যেতে হয় এবং তাকেই ওই নারীর খোরপোষের তাহলে তা একইসঙ্গে দুটি শাস্তির সমান বলে বিবেচিত হবে।’
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ইসলাম যে নিয়মতান্ত্রিক ও যুক্তিসঙ্গত ধর্ম তাকে কাটছাঁট করতে গেলে হাস্যকর পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়াবে। এটা ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করার শামিল। ওই বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করে মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। এর বিরুদ্ধে সকলের সোচ্চার হওয়া দরকার এবং আমরা এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাবো।’
নতুন ওই বিল আইনে পরিণত হলে তাৎক্ষণিক তালাকে তিন বছর পর্যন্ত কারাবাসের পাশাপাশি জরিমানা দিতে হবে।
কেরালার মুসলিম লিগ এমপি মুহাম্মদ বাশীর কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিলকে ‘সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ ও মুসলিম পার্সোনাল ল’ বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিজেডি এমপি ভর্তৃহরি মহতাব ওই বিলে অপূর্ণতা আছে ও তা পরস্পরবিরোধী বলে অভিহিত করেছেন।
আরজেডি এমপি জয়প্রকাশ যাদব ওই ইস্যুতে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ ও ঐক্যমত্যের ওপরে জোর দিয়েছেন। (পার্সটুডে)