নিজস্ব প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক এই নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি হতে সরকার দলীয় নেতাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে লবিং চালাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে আগামীকাল ২৩ এপ্রিল রবিবার কুষ্টিয়ায় কাউন্সিলের জায়গার অনুমতি না পেয়ে কেন্দ্রের অনুমতিতে ঢাকাতে কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে ঢাকায় আসা শুরু করেছে। বিএনপির পল্টন পার্টি অফিসে সকাল দশটায় সম্মেলন হবার কথা রয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলা বিএনপির সম্মেলনে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর থেকে ভেড়ামারা-মিরপুর আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতার সাথে সমঝোতা করে চলছেন। সরকার পতনের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম কুষ্টিয়ায় বেগবান থাকলেও ভেড়ামারা-মিরপুর বিএনপি কে নিষ্ক্রিয় দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে, যখন বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে তখন অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী সাবেক এমপি সেলিনা শহিদ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলার পর মামলা দেয়া অব্যাহত থাকলেও শহীদুল ইসলাম ও তার পরিবার রয়েছেন একেবারেই মামলামুক্ত।
এছাড়া ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে শহিদুল ইসলামের পছন্দের প্রার্থী মনোয়ন না পাওয়ায় তিনি সরকার দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে উঠে পড়ে লাগেন। সেই নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি মহিউদ্দীন বানাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু শহিদুল ইসলামের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন শামীম রেজা। তখন শহিদুল ইসলামের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে এসে গণপদত্যাগ করে ২শ’র বেশি নেতা কর্মী। সংবাদ সম্মেলনে সে সময় নেতাকর্মীরা বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্যের উপর নারাজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন বলে জানায়। লিখিত বিবৃতিতে তারা জানিয়েছিলেন, পৌরসভা নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. তৌহিদুল ইসলাম আলম নিজ স্বার্থের জন্য দলের গঠনতন্ত্র বর্হিভূত কাজ করেছেন। ফলে ওই ঘটনার দায় না নিতে তারা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম ভেড়ামারা উপজেলার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক বছির উদ্দিন বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার-উল আজিম বাবু, পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক, উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম রেজা, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মজিবর রহমান বাবু মন্ডল প্রমুখ।
এদিকে ২০০৪ সালের ২১ এপ্রিল আমবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা গোলাম মস্তফা ওরফে মুকুলকে সন্ত্রাসীরা গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। মামলার খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা তখন দাবী করেন, সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি শহিদুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে আলোচিত এই হত্যা মামলায় মূল সন্ত্রাসীদের বাদ দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিবর চেয়ারম্যান, ওবাইদুল ওরফে লাল ও কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতার নাম জড়িয়ে দেন। সে কারনে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। সূত্র আরো জানায়, বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় হত্যা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক মামলা হয় শহিদুল ইসলমের নামে। তখন তিনি দুই বছর পালাতক ছিলেন। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে সরকারের কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান এমপির সঙ্গে আতাত করে একে করে তার অনেক গুলি মামলা খারিজ করেন। এমনকি তিনি রাজনৈতিক জীবনে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্য ও কারাবরণ করেননি। এমনকি আন্দোলন সংগ্রামে আহত এবং কারাবরণ নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজখবর নেননি। সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, শহিদুল ইসলাম ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে সংসদ সদস্য থাকাকালে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। আর সে টাকা দিয়েই তিনি কানাডার বেগম পাড়ায় একই মডেলের দুই টি বাড়ি করেন।
এর মধ্যে একটি বাড়ি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা কে উপহার দেন। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির প্রথম সারির নেতা শামিম আরজু জানান, রাজনৈতিক মাঠে বা সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা ২০০৯ সাল থেকে আছে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে মেহেদী রুমী এগিয়ে থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিশ্বস্ত অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, কুষ্টিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার প্রচুর অর্থের মালিক হবার কারণে সহ-সভাপতি হবার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে সমর্থন দিচ্ছে শহিদুল ইসলাম। এ ব্যাপারে শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সব মিথ্যা। সভাপতি প্রার্থী কিনা এমন প্রশ্নে বলেন আমি কিছুই জানিনা। লোক মুখে শুনছি আমি প্রার্থী। আপনার বিরুদ্ধে হওয়া সকল মামলা থেকে আপনি খালাস পাচ্ছে কিভাবে এমন প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি শহিদুল ইসলাম।
এ বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, ‘শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আমি ৮/১০ বছর ধরে পাচ্ছি। তার সাথে বারো বছরে একবার দেখা হয়েছে।’ তাকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করেছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, ভেড়ামারা-মিরপুরের রাজনীতিতে সরকার দলীয় জোটে স্থানীয় বেশ কিছু সমস্যা আছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চলেন শহিদুল ইসলাম। সে এক সময় হানিফের সাথে থাকে আরেক সময় ইনুর সাথে থাকেন। ভোটাভোটি হয়েও যদি শহিদুল সভাপতি হয় সেখানে কেন্দ্র আগের নেতাদের বিষয় বিবেচনা করবে। কারণ এমন কাউকে নেতা বানানো হবে না যে দলের জন্য হুমকির কারন হতে পারে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন জানান, সভাপতি হিসেবে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে মনোনিত করলে দল ও নেতাকর্মীরা উপকৃত হবেন। কারণ এই দুই নেতার হাত ধরে ২০ দলীয় জোট আন্দোলন সংগ্রামে বেশ ভূমিকা রেখেছে।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই