যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি: সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অনিয়মের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ চার নেতাকে ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে। সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ ও ৮ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির দুই দফা বৈঠকের পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এসব সভায় কার্যকরী কমিটির ৭২ সদস্যের মধ্যে ৪৮ জন উপস্থিতি ছিলেন বলে এতে বলা হয়।
এছাড়া সংগঠনের কার্যকরী কমিটির আর তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সভাপতি ছাড়া ‘বহিষ্কৃত’ বাকি তিন নেতা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ এবং নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান। শাহানারা ‘বহিষ্কৃত’ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী।
এছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ বশারত আলী, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এবং দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে।
সাতদিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে এই তিনজনকে বহিষ্কার করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বর্তমান কার্যকরী কমিটির গত চার বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব নিয়ে কয়েক মাস ধরেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়।
এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদের নেতৃত্বে কার্যকরী কমিটির ওই সাধারণ সভা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসার পর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও কমিটিতে তার পক্ষের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ৮ ডিসেম্বর একটি সভা আহ্বান করেন।
সাজ্জাদ পক্ষের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ ও বাধার মধ্যে হওয়া সভাপতি পক্ষের রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকেও কয়েকজনকে বহিষ্কারের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান পক্ষের নেতাকর্মীদের দাবি, ৬ ডিসেম্বর কার্যকরী কমিটির ওই সভা আহ্বান করতে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী চার সপ্তাহ আগে সভাপতি সিদ্দিকুরের অনুমোদন নিয়ে সদস্যদের মাঝে বৈঠকের নোটিশ দেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি চলার মধ্যে সভাপতি পাল্টা বিবৃতিতে ওই সাধারণ সভার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
পরে ৬ ডিসেম্বরের সভায় সভাপতিসহ তার পক্ষের কয়েকজন অনুপস্থিত থাকলেও কমিটির ৭২ সদস্যের মধ্যে ৪৩ জন উপস্থিত হন।
এই প্রথম সভা থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বহিষ্কার এবং দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া সভায় চার বছরে কয়েকটি অনুষ্ঠানের নামে সংগ্রহ করা চার লাখ ডলারের হিসাব কমিটিতে না দেওয়ার জন্য সভাপতির সমালোচনা করা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন গণমাধ্যমকে জানান।
এরপর সভাপতি সিদ্দিকুর ৮ ডিসেম্বর কার্যকরী কমিটির আরেকটি জরুরি সভা আহ্বান করেন। ওই সভায় সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদসহ নেতাদের নিয়ে ঢুকতে চাইলেও নিরাপত্তারক্ষীদের মাধ্যমে তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সাজ্জাদ পক্ষের।
সভাপতি ‘ভাড়া করে লোক এনে’ ওই সভা করেছেন বলে দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদিক আইরিন পারভিন।
তিনি বলেন, “কার্যকরী কমিটির সভা, অথচ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ছয়জন। আরও কিছু লোক ছিলেন, তারা কখনই আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন না। কোনো মিটিংয়েও তাদের দেখিনি, অর্থাৎ ভাড়া করে আনা হতে পারে।”
সভাপতি তার বৈঠকে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ৮ ডিসেম্বরে ৪৮ জনের উপস্থিতিতে আরেকটি বৈঠকে সভাপতিসহ বাকিদের বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ।
সভাপতি ও তার স্ত্রীকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ ও যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী বলেন, “দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে সিদ্দিকুর রহমান লাগাতারভাবে অসাংগঠনিক কাজ করেছেন।
“এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া বেশ কটি অঙ্গরাজ্য কমিটিতেও বিভক্তি তৈরি করে প্রকারান্তরে জামায়াত-শিবিরের ‘পারপাস সার্ভ’ করেছেন সিদ্দিকুর।