সুনামগঞ্জ সংবাদদাতাঃ হত্যা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর পাল্টা প্রতিশোধ নিতে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলীত পোষ্টার পোড়ানোর উস্কানি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় দু’ সাংবাদিক ও এক কলেজ ছাত্রের বিরুদ্ধে এক বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ধারী সাধারন ডায়েরি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশকে শাসক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাপের মুখে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাটে গত ৩০ জানুয়ারী রাতে হোটেল পরিস্কার করতে গিয়ে ময়লা ছেড়া ফাড়া বিভিন্ন খেলাধুলার পোষ্টার হোটেল মালিক বাজারের গলিতে ফেলে দিলে বাজারের নৈশপ্রহরি শীতের প্রকোপ ঠেকাতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। ঐ ঘটনার ২দিন পর ১লা ফ্রেবুয়ারী মানিক হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আসামীদের প্ররোচনায় বড়দল উওর ইউনিয়নের পৈলনপুর গ্রামের দর্জি জীবন কৃঞ্চ তালকদারের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পরিচয়ধারী ঝুমুর জীবন কৃঞ্চ তালকদার বাদী হয়ে দৈনিক যুগান্তরের তাহিরপুরের ষ্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের ষ্টাফ রিপোর্টার হাবিব সরোয়ার আজাদ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়ের সংবাদের তাহিরপুর প্রতিনিধি বাদাঘাট সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ছাত্রলীগ কর্মী আলম শেখ ও সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মীর সহ তিন জনের বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরী করেন। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে চাঁপে ফেলতে বহুল আলোচিত মানিক হত্যাকান্ডের আসামী ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে কৌশল অবলম্বন করে শাসকদলের ক্ষমতা কাটিয়ে ঝুমুর তালুকদার একাধিক মানববন্ধন কর্মসূচি পালনও করেছে।
এদিকে ঐ ঘটনায় তাহিরপুরের বাদাঘাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মানিক হত্যাকান্ডের আসামী মাসুক মিয়ার লালিত বাজারের পাহাড়াদার সুয়াদ আলী ও জয়নাল আবেদীনকে দিয়ে পরিকল্পিত ভাবেই সাংবাদিকদেও ও কলেজ ছাত্রকে ফাঁসানোর জন্য ও তার ক্ষমতার জানান দিতে গিয়ে ঐ রাতে পরিকল্পিত ভাবে পোষ্টার জ্বালানো পোড়ানোর নাটক সাজিয়েছেন বলে একাধিক সুত্রে নিশ্চিত করেছেন। মাসুক মিয়া বাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন এমনকি আন্ডার গ্রাউন্ডে নেতৃত্বের আড়ালে রেখেছেন নীজ গ্রামের প্রতিবেশী ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ঝুমুর তালুকদারকে। ঝুমুরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মানিক হত্যামামলা আসামীরা। বিভিন্ন সময় অসময়ে উস্কানিমূলক তথ্যগত ভূল তথ্য দিয়ে মামলা হামলায় জড়িয়ে রাখেন অসহায় নীরিহ মানুষকে। তাদের দাপটে অনেকে মূখ খুলতে নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৈলনপুর গ্রামে মাসুক মিয়া ও ঝুমুর তালুকদারের জন্ম। সেই সূবাধে একে অপরের কাধে কাধ মিলিয়ে একসঙ্গে এলাকায় শাসন শোষণ ও গণ হয়রানি করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে। ধনজনে বলীয়ান মাসুক মিয়া ঝুমুর তালুকদারকে বড় অংকের হাদিয়া হাতে ধরিয়ে দিয়ে মামলায় জড়িয়ে থাকেন নীরিহ লোকদের। খুন খারাপি সন্ত্রাসী দুর্বত্তদের পেছনে মদদ দিয়ে থাকেন মাসুক ও তার সঙ্গী ঝুমুর তালুকদার। অনেকক্ষেত্রে মূলধারার সংবাদকর্মীদেরও বির্তকিত করতে দ্বিধাবোধ করেননা ওই দুইজন কর্তা। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে নিজেদেরকে সমাজের চোঁখেনেতা সাঁজাতে ও দেখাতেও পিছু হটেন না তারা। এভাবেই চলছে তাদের নিত্য দিনের কার্য্যকলাপ। এর ফাঁকফোঁকোরে মধ্যখানে তোপের মূখে পড়তে হচ্ছে থানা পুলিশকে। তারা ও তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন সামাজিক ও যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলীত পোষ্টার জ্বালাওপোড়াও করা হয়েছে। কিন্তু এসবের আড়ালে থেকে যাচ্ছে প্রকৃত ঘটনাবহুল ঘটনার চিত্র।
বাদাঘাট বাজারের মামা-ভাগনা হোটেল মালিক লিটন দাস’র সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন তিনি বলেন, বিগত ৩০ জানুয়ারি রাত সাড়ে বারোটার দিকে হোটেল বন্ধ করার সময় খেলাধুলার বেশ কয়েকটি পোষ্টার ও অপ্রোয়জনীয় কাগজাদি হোটেলের বাইরে ফেলে দেন। সেগুলো কে বা কারা জ্বালিয়েছে তার তা জানাও নেই।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, ঘটনার রাতে দু’জন পাহাড়াদার সুয়াদ আলী ও জয়নাল আবেদীন মিলে ওই সকল কাগজাদি জ্বালাও পোড়াও করেছেন ।
তিনি আরো জানান, মাসুক মিয়া তার শ্যালক আজহারুল ইসলাম সোহাস, ভাগ্নে আবুল মনসুর ও জহিরুল ইসলাম এরা সকলেই মানিক হত্যাকান্ডের আসামী ছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে দৈনিক যুগান্তর সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে ও অনলাইন নিউজপোর্টালে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে সেই জের মেটাতে কৌশলে মাসুক মিয়া এই নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয় এবং মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক একটি অভিযোগ দাখিল করে শাসক দলের দোহাই দিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে এবং সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রত করছে।
এদিকে এবিষয়ে উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কাশেমমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন সচেতন নাগরিক বা সংবাদকর্মী ওইরকম কোন কাজ করতে পারেনা তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অপপ্রচার। এটা সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দুর্বত্তরা সাংবাদিক সমাজকে প্রতিপক্ষ হিসাবে ঘায়েল ও হয়রানি করতে গুজব ছড়াচ্ছে ।
তিনি আরো জানান, যখন এই পোষ্টারগুলো জ্বালানি হয় সেই মূহূর্তে কেন থানা পুলিশকে জানানো হয়নি? বা ঘটনার সময় আলামত হিসেবে দুই থেকে একটি পোষ্টার জব্দ রাখেনি পাহাড়াদাররা। তাছাড়া পুলিশি তদন্তের সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম সেই সময় কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে, জাতীর জনক বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পোষ্টার জ্বালানো হয়েছে। তাহলে আসল ঘটনাটি কি ? এ নিয়ে সচেতন মহল বিব্রতবোধ করছে।
এদিকে আরো জানা যায়, বিগত ৩০ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটলে পরদিন সকালে কোন অভিযোগ তাহিরপুর থানায় দাখিল না করে দু’দিন পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে থানায় দাখিল করা হয় লিখিত অভিযোগ। রহস্যজনক হলেও সত্য যে, অভিযোগকারীরা বাজারের পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়িকেও বিষয়টি তখন অবহিত করেনি। এমনকি অভিযোগ করার পূর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন-অঙ্গসংঘটনের নেতৃবৃন্দকেও অবহিত করেনি বলে অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ থেকে স্পষ্ট যে, ব্যাক্তি স্বার্থে মগ্ন হয়ে উস্কানিমূলক তথ্যগত ভূল তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ঝুমু তালুকদার। আর মূল ঘটনাকে আড়াল করতে এবং সত্যকে ধামাচাঁপা দিতে দৌড়ঝাপ দিচ্ছে উস্কানিদাতারা।এতে করে ঘটনার সাথে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে আইনের ধরাচোঁয়ার বাইরে।
অন্যদিকে স্থানীয় এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা ঝুমুর তালুকদার ইতিমধ্যে নিজেকে ও তার সঙ্গীদের বাচাতে মামলার আসামী সহ স্থানীয় দুই-তিনজন সংবাকর্মীকেও ম্যানেজ করেছেন। যাতেকরে ওইসকল ঘটনাকে দেশের লোকজনের নিকট প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারেন এবং সরকারী দলের নেতাকর্মীদের দৃষ্টিগোচর করতে পারেন। আর মধ্যখানে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি নিজের সুনাম বাড়াতে পারেন শাসকদলের নিকট। এই কতিপয় হলুদ সংবাদকর্মীদের ডাল হিসেবে ব্যাবহার করছেন তারা। কারন যখনই এসকল দুর্বত্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয় ঠিক তার পরবর্তী সময়ে ঐ সংবাদকর্মীকে বেকায়দায় ফেলতে দুর্বত্তরা ষড়যন্ত্রমূলক জাল বিস্তার করে থাকেন। আদালতে মামলা নতুবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে থাকেন তারা। বির্তর্কিত করতে সমাজের চোঁখকে ধূলো দিয়ে এসব রঙ্গমঞ্চের নাটকের জন্ম দেয় দুর্বত্তরা। এক কথায় জিম্মি রাখতে মিথ্যা মামলা, হামলা, অভিযোগ দায়ের করা তাদের একটি প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে !
এ ব্যাপারে বাদাঘাট বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক মাসুক মিয়ার সাথে মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার রাতে আলাপকালে তিনি বলেন, মানিক হত্যাকান্ডের মামলা থেকে আমি সহ ৮ জনকে অব্যাহতি দিতে মামলার তদন্তকারী এসআই আদালতে আবেদন করেছেন। তবে পোষ্টার জ্বালানির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা । অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ঝুমুর ও আমি একসঙ্গে বড় হয়েছি আমরা একই এলাকার। সে আমাকে বলেছে পোষ্টার জ্বালানি হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না। এদিকে এবিষয়ে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কয়েক দফা ঝুমুর তালুকদারের ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আবুল হোসেন খাঁন বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, পোষ্টার পোড়ানোর ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার পূর্বে উপজেলা আ’লীগ, ছাত্রলীগ এমনকি স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেননি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে অভিযোগকারীদের উচিত ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগ, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবহিত করা। কিন্তু এ বিষয়ে কোন অবহিতই করা হয়নি।
সুনামগঞ্জ এক আসনের এমপি মোয়াজ্জিম হোসেন রতনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি বলেন, আমি শুনেছি পোষ্টার পোড়ানো হয়েছে। তবে বলতে পারবোনা ঘটনাটি সত্য না মিথ্যা। শুনেছি ওই অভিযোগে দু’জন সংবাদকর্মীকেও আসামী করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আমি কিছু জানি না।
তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর বৃহস্পতিবার রাতে বললেন, বিষয়টি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এখনো এ বিষয়ে তিনি কোন প্রকার মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উল্ল্যেখ যে, বিগত ২ নভেম্বর রাতে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর’র অনলাইন ভার্সন ও ৪ নভেম্বর প্রিন্টিং ভার্সন ও পরবর্তীতে সময়ে ও একাধিক জাতীয়, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় মানিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর জের মেঠাতে বাদাঘাট বাজারে খেলাধুলার পোষ্টার জ্বালিয়ে দুর্বত্তরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলীত পোষ্টার জ্বালাওপোড়াও অভিযোগ এনে যুগান্তরের তাহিরপুরের স্টাফ রির্পোটার হাবিব সারোয়ার আজাদ ও সময়ের সংবাদ অনলাইন পত্রিকার তাহিরপুর প্রতিনিধি, এইচএসসি পরীক্ষার্থী, সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী আলম শেখ ও অপর এক এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মীর সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই