জাকির সিকদার ,স্টাফ রিপোর্টার : সাংবাদিক খুনের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। গত দুই যুগে বাংলাদেশে ১৮ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে খুন হয়েছেন ১৭ জন। আর ১৪টি খুনের ঘটনার এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি। জাতিসংঘের বিজ্ঞান,
শিক্ষা ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) থেকে প্রকাশিত ‘প্রতিরোধ ও শাস্তি: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মোকাবিলা ও সমাধানের সন্ধান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি খুন ও মৃত্যুর শিকার হওয়া ২০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যাওয়া এবং খুন হওয়া উভয় তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইরাকের নাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে গত দুই যুগে ১৬৭ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। যার মধ্যে খুন হয়েছেন ১০৪ জন। এরপরই পর্যায়ক্রমে রয়েছে সিরিয়া, ফিলিপাইন, আলজেরিয়া, সোমালিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, কলম্বিয়া ও ভারতের নাম।
ভারতে এই সময়ে ৩৫ জন সাংবাদিক মারা গেছেন, খুন হয়েছেন ২২ জন। এর মধ্যে একটি ঘটনারও বিচার শেষ হয়নি। পাকিস্তানে ৫৬ জন সাংবাদিক মারা গেছেন, এঁদের মধ্যে খুন হয়েছেন ৩২ জন। বিচার হয়েছে দুটি ঘটনার, বাকি ঘটনাগুলোর বিচার চলমান।
সোমবার সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে প্রকাশিত ওই বৈশ্বিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচ দিনে একজন সাংবাদিক সংবাদ লেখার কারণে খুন হচ্ছেন। গত এক দশকে ৭০০ জন সাংবাদিক এভাবে খুন হয়েছেন। এই খুনগুলো বিশ্বজুড়ে আইনের শাসন ভেঙে পড়া ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ইউনেসকো, সেন্টার ফর ফ্রিডম অব দ্য মিডিয়া, আর্টিকেল-১৯ এবং লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক দায়মুক্তি অবসান দিবস উপলক্ষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবাদিক খুনের বিচার না হওয়ার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও অপরাধের ঘটনাগুলো বাড়ছে। সরকার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে সাংবাদিক হত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ আছে ওই প্রতিবেদনে।
২০১৩ সালে জাতিসংঘের ৬৮তম অধিবেশনে সাংবাদিক খুনের দায়মুক্তির বিরুদ্ধে সদস্যদেশগুলো অঙ্গীকার করে। উল্লেখ্য, ২ নভেম্বর মালিতে দুজন ফরাসি সাংবাদিক খুন হওয়ার পর ওই দিনটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক দায়মুক্তি অবসান দিবস হিসেবে বেছে নেয়া হয়।