সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ২০১৬-২০১৭ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে নতুন বৈশ্বিক সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যেন এর সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে না পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মোকাবেলায় আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছি। জনসচেতনতার সৃষ্টির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীও এ ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে।
উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে এমন কিছু ঘটুক তা চাই না, তা কখনোই কাম্য নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করি।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকবিলায়ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছেন।
“শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসনীয় কাজের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সাফল্যে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে আরও বড় ধরনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখবে।
ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের এই স্টাফ কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আওতায় একইভাবে সেনা ও বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এবং চৌকস ও পেশাদারভাবে গড়ে তুলছি।
সবশেষে প্রধানমন্ত্রী কোর্স সম্পন্নকারী অফিসারদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন।
এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮ জন, নৌ বাহিনীর ২৭ জন ও বিমান বাহিনীর ২৪ জন এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিয়েরা লিয়েন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাম্বিয়ার ৭১ জনসহ মোট দুইশো ৮০ জন অফিসার ডিএসসিএসসি ২০১৬-২০১৭ কোর্সে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ডান্ট মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন।
পরে গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে কেক কেটে উদযাপন করেন।