ডানা মেলতে শুরু করেছে শীতের পাখি। প্রকৃতিতে আগমন ঘটতে শুরু করেছে শীতকালের।
বাড়তে শুরু করেছে ধূলা আর রুক্ষতার প্রভাব। শীতকালে প্রকৃতিতে আদ্রতার প্রভাব কমে আসে। তখন শুস্ক হয়ে ওঠে ত্বক, চুল, হাত পায়ের তলা, পায়ের গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত। আর অতিরিক্ত শুষ্ক হবার জন্য ফেটে যায় পায়ের গোড়ালির শক্ত চামড়া পর্যন্ত।
চামড়া শক্ত ও অতিরিক্ত মোটা হওয়ার জন্য অনেকের পায়ের গোড়ালি ফেটে রক্ত বের হয়। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের এই চামড়া গুলোতে চুলকানোর ‘সমস্যাও দেখা যায়।
নখের ধাক্কা লেগে পায়ের গোড়ালির ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও কালো। শীতকালের সমস্যাগুলোর মধ্যে পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়াটা খুব পরিচিত একটি সমস্যা।
যে কারণগুলোতে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়, তা হলো
১. শুষ্ক আবহাওয়া। অর্থাৎ যে সময়ে প্রকৃতিতে আদ্রতার ভাব কমে আসে আর ধূলা উড়ে বেশি। তখন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়।
২. সারা বছর অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহার করা, দিনের কাজ শেষে পা না ধুয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া, ফেটে যাওয়া পায়ের চামড়া টেনে উঠিয়ে ফেলা, প্রচুর পরিমাণে পানি শূন্যতা, দেহে রক্তের অভাব, এই সমস্যাগুলোতে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়।
৩. অনেকেই বারবার পা ধুয়ে ফেলেন, কিন্তু ঠিকভাবে মোছেন না, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে পানি জমেই থাকে। এইভাবে পানি জমে থেকে গোড়ালিসহ আঙ্গুলের কোনাও ফেটে যায়।
৪. যারা অতিরিক্ত কাদা, পানি, লবণাক্ত স্থান (ট্যানারী) সমুদ্রের নিচে বা পানিতে সব সময় কাজ করেন, তাদের ফেটে যায়।
৫. অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন ব্যক্তিদেরও ফাটতে পারে। দীর্ঘ বছর যাবত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুর্বল হযে যায়। তখন ত্বক ফাটতে পারে।
৬. সারাবছর অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল করলেও পা ফেটে যায়। আবার পারিবারিক বা বংশগত কারণেও অনেকের পা ফাটে। রক্তের সম্পর্কিত কারো পায়ের গোড়ালি অতিরিক্ত ফেটে যাবার ইতিহাস থাকলে, তখন আপনারও পা ফাটতে পারে।
৭. মাদক দ্রব্য সেবনকারী, গর্ভাবস্থা, মাতৃদুগ্ধ দানকালিন সময়, বড় কোনো অপারেশনের পরে মানুষের দেহে নানা রকম পুষ্টির অভাব হয়। তখনও পা ফাটে।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া প্রসঙ্গে ‘রেড বিউটি সেলুনের’ সত্ত্বাধিকারী আফরোজা পারভীন বলেন, “অধিকাংশ মানুষের পায়ের গোড়ালি ফেটে যায় শীতকালে। আবার অনেকের সারা বছরই ফাটে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাহির থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাহির থেকে এসেই সাবান দিয়ে হাত পা ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপরে মায়শ্চারাইজিং করার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি, লোশান বা কোনো ক্রিম লাগান। মরা কোষগুলো পেট্রোলিয়াম জেলীতে নরম হয়ে, উঠে যায় বেশি।
অনেকের আবার চামড়া উঠে রক্তপাত হয়। গোড়ালি বেশি ফেটে গেলে পুরু করে প্রেটোলিয়াম জেলি লাগিয়ে মোজা পরতে পারেন। এতে জেলি মোজাতে লেগে গেলেও ফাটা স্থানগুলোতে লাগবে।
এছাড়া কাঁচা হলুদের প্যাকও লাগাতে পারেন। কাঁচা হলুদের সঙ্গে তেলটা ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে। মুলতানি মাটি, অ্যালমন্ড অয়েল, এই তিনটার প্যাক পায়ে লাগিয়ে, ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এতে ফাটা কমবে। তারপরে নরম ব্রাশ দিয়ে পায়ের মরা চামড়াগুলো ঘষে আলতো করে তুলে ফেলেন। বাসায় বানানো এই প্যাকটা ফ্রিজে রাখতে পারেন। ”
২. পানিশূন্যতা, অপুষ্টি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের কোনো সমস্যা থাকলে তা দূর করুন।
৩. প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল, শাকসব্জি, পানির পরিমাণ বেশি এমন খাবার খান।
৪. পায়ের চামড়া টেনে তুলবেন না।
৫. দেহের গঠন ও আবহাওয়া বুঝে জুতা, মোজা ব্যবহার করুন। তারিখ পার হয়ে যাওয়া প্রসাধনী, মাদক দ্রব্য বর্জন করুন।
৬. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা ভীষণ জরুরি।
ডাঃ ফারহানা মোবিন,
লেখক, চিকিৎসক ও উপস্থাপিকা
বারডেম হসপিটাল।