চান মিয়া, ছাতক (সুনামগঞ্জ)ঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে গত ৮মাসে অসংখ্য গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন চোর গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে গডফাদাররা। এক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগও পুলিশের সুষ্টু নজরদারি না থাকায় এদের অপতৎপরতা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় পুলিশ চোরদের গ্রেফতার করে যোগাযোগিমূলক ৫৪ধারায় আদালতে সোপর্দ করায় চোরচক্র এক্ষেত্রে আরো উৎসাহিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, ৫সেপ্টেম্বর আন্তঃজেলা গরু চোরচক্রের সদস্য নোয়ারাই ইউনিয়নের লক্ষীবাউর গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর পুত্র ময়না মিয়া (৪০)কে গ্রেফতার করে রহস্যজনক কারনে ৫৪ধারায় আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। গত ১৪আগষ্ট রাতে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউপির খাশিলা গ্রামের মর্তুজ আলীর ৪চি গরু চুরি করলে লক্ষীবাউর গ্রামবাসী ময়নাকে গরুসহ আটক করলে সে কৌশলে গরু ফেলে পালিয়ে যায়। ৩দিন পর লক্ষীভাউর মাদ্রাসা মাঠে এলাকাবাসী বসে চুরি, মদ, গাজা, জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এবং তারই চাচাতো ভাই সাদুলার পুত্র গ্রাম্য মাতব্বর কুতুব উদ্দিনকে ময়নার অপকর্মে সহযোগিতা না করে শাষন করার জন্য বলেন। এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্ম করলে ময়না মিয়াকে একলাখ টাকা, কুতুব উদ্দিনকে ৫০হাজারও অন্য যারা এসব অপকর্মে জড়িত থাকবে তাদেরকে দু’লাখ টাকা জরিমানা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। ১৭আগষ্ট গরু আটকের খবর পেয়ে মর্তুজ আলী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ লক্ষীভাউর এসে গরুগুলো নিয়ে যান। এঘটনায় মর্তুজ আলী বাদি হয়ে জগন্নাথপুর থানায় ময়না মিয়ার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা করেন বলে জানাগেছে। কিন্তু ৫সেপ্টেম্বর সোমবার ময়না মিয়াকে নিজ বাড়ী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করলে নোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা, ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন তালুকদার, নোয়ারাই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি হাজি হারিছ আলী, আলমাছ আলী, সাবেক মেম্বার আশকর আলী, ফারুক মিয়া, উসমান আলী, মতছির আলী, ছালিক মিয়াসহ লক্ষীবাউর গ্রামের লোকজন থানায় উপস্থিত হয়ে ওসি আশেক সুজা মামুনকে ধৃত চোরের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। এসময় তার বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, জুয়া, মদ, গাঁজা ও হিরোইন ব্যবসাসহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এত অভিযোগের পরও রহস্যজনক কারনে ময়নাকে ৫৪ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসআই আব্দুল হালিম।
এছাড়া ১৩ফেব্রুয়ারি কৈতক গ্রামের জুনাব আলীর পুত্র শাহাব উদ্দিনের দু’টি বলদ, আব্দুল মতিনের ২টি, অজিত ভোমিক কানুর ২টি, ঋষু আদিত্যের ১টি গাভী ও কাজল দস্তিদারের ২টি বলদ চুরি হয়। ৫জুলাই ছাতক সদর ইউনিয়নের কাজিহাতা-নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল হাশিদ, বসির মিয়া, ইজ্জাদ আহমদও আব্দুল করিমের দু’টি করে হালের বলদ চুরি, ১০জুলাই কালারুকা ইউপির করছখালী গ্রামের ফয়জুল ইসলামও নূরুল হকের হালের বলদ চুরি, ৩০মে’ চরভাড়া গ্রামে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে গরু চুরির সময় পুলিশ-জনতা সুরমা নদী থেকে দু’টি গরুও একটি ইঞ্জিন নৌকাসহ ৬গরু চোরকে গ্রেফতার করা হয়। আটককৃতরা হলো, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বটেরতল গ্রামের রইছ আলীর পুত্র হাবিবুর রহমান গেদা, বিশ্বনাথ উপজেলার কমলপুর গ্রামের আব্দুল আহাদের পুত্র আলী আকবর, সিলেটের জালালাবাদ থানার মানসিনগর গ্রামের আব্দুন নুরের পুত্র সাইফুর রহমান, একই এলাকার আঞ্জব আলীর পুত্র লিলু মিয়া, জমসিদ আলীর পুত্র জামাল আহমদও চেরাগ আলী। পরে এদের বিরুদ্ধে চরভাড়া গ্রামের সৈয়দ মিয়ার পূত্র হোসেন মিয়া বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রায় এক বছর আগে ছাতক সদর ইউপির মধুকুনি গ্রামের সিরাজ মিয়ার বাড়ি থেকে চুরির ৫টি গরু উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ইসলামপুর ইউপির রঘু সিংহের মহিষ চুরির সময় চেরাগ আলী নামের এক চোরকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এরআগে একই বাড়ি থেকে একটি হালের বলদ, নিজগাঁও গ্রামের চান মিয়ার একটি বলদ ও তৈয়ব আলীর ৩টি বলদ ও সীমান্ত এলাকার ধনীটিলা গ্রামের নিশি বাবুর ৩টি বলদ চুরি হয়। পরে গরু চোর সর্দার আব্দুর রহমান চটুকে টাকা দিয়ে কয়েকটি গরু ফেরত নেন কৃষকরা। এভাবে ৩০আগষ্ট ভাতগাঁও ইউপির ঝিগলী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী হাজি তছব্বির আলীর পুত্র হাজি ইবরাহিম আলীর বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। ১৯মার্চ ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির রাধানগর গ্রামের মজম্মিল আলীর গোয়াল ঘরে আটক করেন একই গ্রামের আব্দুল খালিকের পুত্র ফকির মিয়াও তেঘরি গ্রামের খালিক মিয়ার পুত্র আফরাজ মিয়াকে। ২৮নভেম্বর পুলিশ দোলারবাজার ইউপির দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের কুখ্যাত গরু চোর মৃত শরাফত আলীর পুত্র কালা মিয়া, মৃত আলকাছ আলীর পুত্র ছোট মিয়াও মৃত সিকন্দর আলীর পুত্র নফর আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২৮মে’ গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউপির বধিরগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র ছয়ফুল আলমও আব্দুস ছাত্তারকে জগন্নাথপুরের মোল্লারপাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল বারিকের পুত্র আবিদ আলীর দু’টি গরুসহ দেখার হাওরে জনতা আটক করেন। এতে সুনামগঞ্জ মডেল থানায় মামলা (নং-৩১, তাং ৩১.০৫.২০১৬ইং) দায়ের করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত ৮মাসে গরু চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ভূক্তভোগিরা।
এভাবে উপজেলার সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পেশাদার গরু চোরও তাদের গডফাদাররা। আইনের ফাঁক-ফোকরে জেল থেকে সহজেই জামিনে বেরিয়ে আসায় পূনরায় তারা এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে। এব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গরুচোরদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি করেছেন উপজেলাবাসী।