আমি যেহেতু প্রায় ২২ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে ছিলাম তাই ব্যর্থতা আমারই।
প্রিয় এলাকাবাসী ক্ষমা করবেন চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতার অভাব নেই,
তেমন চেষ্টারও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু পারিনি।
আসলে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় ছাত্রদের জন্যে, ভাটি এলাকার এই কলেজটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দরিদ্র এলাকা ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য।
সুতরাং তাদের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হয়।
আমি আমার ছাত্রদেরকে নিজের সন্তানের মত ভালোবেসেছি।
তাদের উত্তম ভবিষ্যৎ এর জন্য চেষ্টা করেছি,
আদর দিয়েছি, সোহাগ করেছি, ধমক দিয়েছি,
বুকে টেনে নিয়েছি, কিন্তু চাহিদা পুরন করতে পারিনি।
ইদানিং এ আমার কিছু কথার দ্বারা আমি আমার সন্তানসম ছাত্রদেরকে বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
তাই তারা আমাকে আর চায়না। ক্ষমার কোনো সুযোগও নেই, বিচার ছাড়াই ফাঁসির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
আমি মেনে নিয়েছি।
সারা পৃথিবীতেই তো সন্তানের জীবন সাজাতে গিয়ে অনেক বাবা-মা রাই নিঃস্ব হচ্ছে, পথে বসছে। আমি ব্যতিক্রম হব কেন?
তারা তো কোমলমতি বুঝতে পারেনি এক বাবাকে শাস্তি দিতে গিয়ে তারা তার আরেক ভাই /বোনের রিজিক বন্ধের হাতিয়ার হয়েছে।
আমার কোমল মতি শিক্ষার্থীদের আর কি দোষ,
সারা বাংলাদেশে এত এত পদত্যাগ,
ওরা যদি একটা দু’টা পদত্যাগ না করাতে পারে।
তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা মনে হবে !
পৃথিবীর সব বাবার মত আমিও সব সময় আমার সন্তানের বিজয় দেখতে চাই।
আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, তবুও স্বপ্ন দেখতাম এই ক্যাম্পাস থেকে সাদা কাফনে বা লাল গালিচায়,
ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় হবো, আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। এক নিমিষেই সব শেষ।
এই শেষ বয়স এসে পৃথিবীর কারোর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, কষ্ট পেয়েছি, প্রাণ খুলে কেঁদেছি, হালকা হয়েছি, মেনে নিতে চেষ্টা করছি।
সবকিছুর ফয়সালাতো উপর থেকেই হয়।
আল্লাহর কাছে বলেছি “হে আল্লাহ তোমার দুনিয়া তো অনেক বড়, তুমি নিশ্চয়ই কোন না কোন জায়গায় আমার জন্য, আমার সন্তানের জন্য উত্তম রিজিক এবং সম্মানের ব্যবস্থা করে রেখেছো”।
‘আমি আশা করতে চাই বা বলতে চাই.. বাংলাদেশের তথা পৃথিবীর কোন ছাত্র যেন তার নিকৃষ্ট শিক্ষকটিরও রিজিক বন্ধের হাতিয়ার না হয়।
কারণ, এই পদ্ধতি যে কত বেদনার, কত কষ্টের তা আমি ভক্তভুগি ভালোভাবে টের পেয়েছি।
আমি যেন এই পদ্ধতিতে বিদায় হওয়ার পৃথিবীর শেষ শিক্ষকটি হতে পারি।
শিক্ষক বিদায় করার অনেক পদ্ধতি আছে। সেগুলো প্রয়োগ করা হোক, ছাত্র দিয়ে কেন?
ভালো থেকো “চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ’ খুব ভালো থেকো”।
সংগৃহীত