জীবন পাল: গ্রাম কিংবা শহর, নগর কিংবা বন্দর সবকিছুতেই লেগেছে আজ ডিজিটালের ছোঁয়া। শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে অদূর পল্লিতেও আজ পৌছে গেছে বিদ্যুতের আলো। আকাশ সংস্কৃতি আজ গ্রামের সেই সব চায়ের দোকানগুলোকেও দখল করে নিয়েছে। ঐসব দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। যার বদৌলতে গ্রামীণ জীবনে পৌছে গেছে প্রতিদিনের বিশ ।
অথচ ডিজিটালের ছোঁয়া যেন আজ্ও স্পর্শ করতে পারেনি মৌলভীবাজার জেলার সদর ও রাজনগর থানাধীন অন্ত্যেহরি ও কাদিপুর গ্রামটিকে। ফতেপুর ইউনিয়নের আয়তাধীন এই দুটি গ্রামের মধ্যে অন্ত্যেহরি গ্রামটি পড়েছে রাজনগর থানাধীন এবং কাদিপুর গ্রামটি পড়েছে মৌলভীবাজার সদর থানার আয়তাধীন। হিন্দু অধুষিত এই দুই গ্রামে মোট প্রায় ৭ হাজার মানুষের বসবাস। ৯৯ ভাগ মানুষের পেশা কৃষি কাজ হলেও গ্রামের মানুষের কিছু অংশ জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে। হয়েছে দেশান্তরী। সচেতন অন্ত্যেহরি গ্রামবাসীর মধ্যে শিক্ষক পুলক দাশ একজন। অন্ত্যেহরি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন সব গ্রামে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগলেও অন্ত্যেহরি ও এর পাশর্^বর্তী কাদিপুর গ্রামটিতে এখনোও ডিজিটালের ছোঁয়া লাগতে পারেনি।
এই গ্রামের অনেকেই শিক্ষা দীক্ষায় সচেতন হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করলেও গ্রামের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি বললেই চলে। শিক্ষা-দীক্ষায় এই গ্রাম নগন্য বলে এই শিক্ষকের মন্তব্য। তিনি জানান, এই দুই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৩ টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১ টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২ টি অন্ত্যেহরিতে ও অপর ১ টি কাদিপুরে। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি রয়েছে অন্ত্যেহরিতে। ছেলেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাড়ি দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করার ক্ষেত্রে উৎসাহী হলেও, মেয়েদের ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতা থেকে যায় মাধ্যমিক পর্যন্তই। এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে ঐ শিক্ষক জানান, গ্রামের ৩০-৩৫ জন ছেলেরা হেটে হেটে ৫ কি:মি পথ পাড়ি দিয়ে মৌলভীবাজার সদরের কলেজে পড়াশুনা করার আগ্রহ দেখালেও মেয়েদের ক্ষেত্রে তা অসম্ভব হয়ে উঠে।
যার কারণে গ্রামে থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখাটাই মেয়েদের জন্য যেন আশির্বাদ স্বরুপ। জানা যায়, এই গ্রামের হাতে গোনা কয়েকজন সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বর্তমানে জেলা ডিসি অফিস, কোর্ট, কলেজ সহ বিভিন্ন সরকারী পেশায় নিয়েজিত আছেন। প্রায় ৫০ জন প্রবাসে রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২ জন আমেরিকা ও ১ জন লন্ডনসহ বাকিরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই গ্রামেরই সন্তান একটি চ্যানেলের এমডি’র দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিস্ক মিডিয়ার সাংবাদিক হিসেবে। এর পরেও যেন অবহেলিত এই দুটি গ্রাম। রাস্তা-ঘাটের অনুন্নয়নের কারণেই এই দুটি গ্রাম আজও এই অবহেলিত থাকার প্রধান কারণ বলে আখ্যায়িত করেন সচেতন অনেকেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে বর্ষা মৌসুমে গ্রামের রাস্তাঘাট ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের আঙ্গিকে রুপ ধারণ করে। সেই সময পথঘাটের অবস্থা থাকে সূচনীয়। গ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্ত্যেহরি গ্রামটি ফতেপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের আয়তাধীন হওয়ায় এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার অমর দাশ জানান, আসলে আমরা গ্রামবাসীর পক্ষে উন্নয়নে উদ্যোগী হলেও কতৃপক্ষ উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছেনা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই দুটি গ্রামের উন্নয়ন সম্ভব না।
অবহেলিত এই গ্রামের উন্নয়নের দিকে সচেতন গ্রামবাসীসহ সমাজের উচ্চপদস্থ্য কতৃপক্ষের দৃষ্ট আকর্ষণ করেছে গ্রামের সাধারণ মানুষ।