বর্তমানের ডিজিটাল যুগ তীব্র প্রতিযোগিতার। জীবন জীবিকার ইদুর দৌড়ে ছুটে চলেছি আমরা সবাই। সব জায়গাতে আজ তুমুল প্রতিযোগিতা। শীর্ষে পৌছানোর যুদ্ধে আমরা সবাই আজ ভীষণ ব্যস্ত। শুধু প্রতিষ্ঠার পেছনে ছুটলেই চলবেনা। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। ভেজাল খাবার, পরিবেশ দূষণ আর অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য, আমরা অকালেই আক্রান্ত হচ্ছি বিভিন্ন ধরণের অসুখে। কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে দিনে দিনে নবীনদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ বেড়েই চলেছে। যা ভীষণ দুঃখজনক। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদেরকে মনোযোগী হতে হবে নিজের প্রতি। আমরা নিজেরা সুস্থ্য না থাকলে, সঠিকভাবে কাজ করতে পারবোনা। তাই নিজেরা সুস্থ্য থাকার জন্য নিজেদের যতœ নিতে হবে। আমাদের চারিপাশে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য রোগ জীবাণু। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেলে, অসুখের জীবাণু আমাদের শরীরে বাসা বাধে। সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে, জটিল পরিস্থিতি ধারণ করতে পারে। তাই মেনে চলুন স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু পরামর্শ। যেমনÑ
যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তারা নিয়মিত ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার মাপবেন। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার এর মাত্রা সব সময় একরকম থাকেনা। তাই অবশ্যই নিয়মিত মাপবেন। দীর্ঘ বছর যাবৎ এই অসুখগুলোতে আক্রান্ত হলে, ছয় মাস পর পর পুরো শরীরের চেকআপ করানো ভীষণ জরুরী। ডায়াবেটিস ঘুণে ধরা পোকার মতো, পুরো দেহকে দূর্বল করে দেয়।
তাই অবশ্যই নিজের প্রতি মনোযোগী হোন।
নারীদের ভীষণ পরিচিত একটি সমস্যা হলো ফাইব্রয়েড নামের এক ধরণের টিউমার। মধ্য বয়স্ক নারীদের এই সমস্যা খুব বেশী। নারীদেরকেও প্রতি বছর পুরো দেহের চেক আপ করানোটা ভীষণ জরুরী। পুরুষ মানুষের তুলনায় তাদের দেহে রক্তের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। আর আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী গৃহবধু। বাহিরের জগতের সাথে সম্পৃক্ত নন। এই জন্য স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব একটা সচেতন নন। নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরো বেশী সচেতন হতে হবে।
পারিবারিক কাজ, নিজের প্রতি অবহেলার জন্য ত্রিশের পর থেকেই অধিকাংশ নারীর হাড়ের মধ্যে ব্যথা, বাতের ব্যথা দেখা যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াটা ভীষণ জরুরী। বছরে অন্তত একবার সেরাম ক্যালসিয়াম (ঝবৎঁস ঈধষপরঁস), ভিটামিন ডি (ঠরঃধসরহ উ), পুরো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি (টষঃৎধংড়হড়মৎধঢ়যু ড়ভ যিড়ষব ধনফড়সবহ) পরীক্ষা করান।
এতে লুকিয়ে থাকা অনেক অসুখ ধরা পড়বে।
বড় কোন অপারেশন হবার পর অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে অন্তত একবার চেকআপের জন্য যাবেন। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসারের ওষুধের ডোজ সব সময় একই রকম থাকবেনা, এটাই স্বাভাবিক। এই জন্য চিকিৎসকের পুরানো প্রেসক্রিপসনগুলোকে সংরক্ষণ করবেন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
শুধু বয়স্কদের অসুখ হয়, তা কিন্তু নয়। আজকাল ছোটদেরও ডায়াবেটিস হচ্ছে। সেই ডায়াবেটিসের নাম “জুভেনাইল ডায়াবেটিস” (ঔাঁবহরষব উরধনবঃবং).
বয়স অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন, দৈহিক পরিশ্রমের অভাব, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া, খেলাধূলার সুযোগের অভাবে, আজকাল অনেক মিশু হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছে এবং পরিণামে আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসে।
যা একটি শিশু, তথাপি একটি পরিবারের জন্য ভীষণ বেদনাদায়ক। তাই পরিবারের শিশুটির দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। ঘন্টার পর ঘন্টা ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন বা গেম নিয়ে ব্যস্ত না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকাল ফাস্টফুডের পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক বেশী।
অভিভাবকদের ব্যস্ততার জন্যও তারা ফাস্টফুডের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন বেশী। আর ঢাকা কেন্দ্রীক বাসাগুলোতে খেলাধূলার সুযোগ বলতে গেলে নেই। শিশুদের ওজন বেড়ে যাবার অনেকগুলো কারণের মধ্যে, এটি একটি অন্যতম কারণ।
সব বয়সের মানুষের জন্যই মেডিটেশন বা ধ্যান ভীষণ জরুরী। ধ্যান, প্রার্থনা, ইয়োগা মানুষকে দেয় মানসিক প্রশান্তি। কমিয়ে দেয় মানসিক চাপ। এতে দুশ্চিন্তা, হতাশা, উচ্চ রক্তচাপ তুলনামূলক কামে।
আর নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার, ফলমূল, শাকসব্জি আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখবে অনেকগুলো অসুখ থেকে।
তাই নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান, ইতিবাচক চিন্তা করবেন সব সময়। ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন যোগাবে। তাই হতাশাকে দূরে রাখার জন্য ইতিবাচক চিন্তা করবেন এবং আপনার মধ্যে কোন সৃজনশীল কাজের প্রবণতা থাকলে, অবশ্যই সেই কাজ করবেন। যেমনÑ গান শোনা, ছবি আঁকা, লেখালেখি, আবৃত্তি করা, বাগান করা, শোপিস বানানো।
পছন্দের কাজ আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। তাই হতাশা মুছে ফেলার জন্য নিজেকে সব দিক দিয়ে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করবেন।
সুযোগ পেলেই হাটবেন, লিফ্ট এর পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত রাত জেগে ফেসবুক বা ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেননা। ফেসবুক থাকলে তা ব্যবহারের যেন নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর সুস্থ্য সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবারের সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখাটা ভীষণ জরুরী।
পরিবারের সদস্যদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ আপনাকে দিবে সুস্থ্য পরিবার। আর সুস্থ্য মানসিক বিকাশ।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্-স্কয়ার হাসপাতাল),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল (অনগোয়িং)
উপস্থাপিকাঃ ‘প্রবাসীর ডাক্তার’ বাংলাটিভিতে প্রচারিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
সম্পাদকঃ (কুয়েত বাংলা নিউজ ডটকম) www.kuwaitbanglanews.com
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকঃ অগ্রদৃষ্টি নিউজ পোর্টাল