বিশ্বকাপ ফুটবল সবার জন্যই বড় উৎসবের সময়, কিন্তু উগান্ডায় সেটি যেন এক দুঃস্বপ্নের স্মৃতিচারণ। ২০১০ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ দেখার সময় এক বোমা হামলায় ৭০জন নিহত হন।
ইসলামপন্থী জঙ্গি গ্রুপ আল-শাবাব ওই হামলা দায় স্বীকার করেছিল। হামলার আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেকে সেই হামলার ভীতি বহন করছেন।
ওই বোমা হামলার জীবিতদের একজন ব্রেন্ডা নানইয়োনজো। তিনি বলেছেন,
”আমার চেয়ারের পাশেই রক্ত দেখতে পাই, আমার বাম দিকে। আমি মনে করেছিলাম এটা অন্য কারো, কিন্তু আমি জানতাম না, আসলে সেটি আমারই রক্ত। এরপরই লক্ষ্য করি, মানুষের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ আমার চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি তখন শুধু নিজের শরীর থেকে সেগুলো পরিষ্কার করার চেষ্টা করছিলাম।”
একটি রাগবি ক্লাব আর ইথিওপিয়ান রেস্তোঁরায় সোমালি জঙ্গি গ্রুপ আল শাবাবেব ওই হামলায় অসংখ্য মানুষ নিহত হন।
উগান্ডা আর ইথিওপিয়া যৌথভাবে সোমালিয়ায় জঙ্গিবিরোধী যে অভিযান পরিচালনা করছিল, তার জবাব দিতেই তাদের ওই হামলা।
আর তখন বেশিরভাগ মানুষ ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা উপভোগ করছিল।
বোমা হামলার ওই ঘটনা ব্রেন্ডাকে আরো দৃঢ় সংকল্প করে তুলেছে। এখন তিনি মিস উগান্ডা সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেও শুরু করেছেন।
কিন্তু তিনি স্বীকার করেন, পুরো ঘটনাটি এখনো তাকে আতংকিত করে তোলে। তিনি বলছেন,
”কোথাও বড় ভিড় থাকলে আমি সেখানে যেতে বা ঠিকভাবে আনন্দ করতে পারি না। এটা আমার জন্য একটি বড় সমস্যা। আমি জানি না, এটা আমি কখনো কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা।”
দেশটির বেশিরভাগ মানুষের এখনও সংশয় আছে যে, এরকম বড় হামলা ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা।
ফুটবল ভক্ত ৭০ বছরের রোমান কানয়োরো বলছেন,
”২০১০ সালের আগে, এরকম সব এলাকা যেন ফুটবলের গ্যালারি হয়ে যেত, সবাই এসে খেলা দেখত। কিন্তু এখন আপনি যেখানেই যান, যদি ট্যাক্সি খুঁজতে যান, কাউকে দেখতে পাবেন না। সবাই খেলা দেখতে বাড়িতে চলে গেছে।”
পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এমিলিয়ান কায়িমা বলছেন, ওই বোমা হামলার ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তাদের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে।
তিনি উগান্ডার নাগরিকদের প্রতিও অনুরোধ করেন যে, যেন তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সহায়তা করেন। মিস্টার কায়িমা বলেছেন,
”আমি অনুরোধ করি, যাতে পুলিশের মতো স্থানীয় বাসিন্দারাও সতর্ক থাকে। যেকোনো সমাবেশেই, সেটা ধর্মীয় সমাবেশ হলেও সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে। যদি সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আমরা আগে পদক্ষেপ নিতে পারবো। ফলে এ ধরণের ঘটনা এড়ানো যাবে।”
আল শাবাবের নতুন কোন হামলা ঠেকানো শুধুমাত্র উগান্ডানদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাদের পশ্চিমা মিত্র, যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাদেশে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে তারাও বেশি মরিয়া।
তবে এতকিছু সত্ত্বেও ব্রেন্ডার মতো অনেকে এখনো ফুটবল ভালোবাসে। তিনি তার তিন বছরের মেয়ে, যারাকেও ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। ফুটবল নিয়ে মেয়ের আনন্দের যেন সীমা নেই।
সূত্র, বিবিসি