জামায়াতের ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য আমির হিসেবে শপথ নিয়েই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করলেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। পাশাপাশি স্মরণ করছি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকেও।’ একইসঙ্গে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত নেতাদের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি প্রফেসর গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলীকে, যারা ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।’ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতের নতুন আমির হিসেবে শপথগ্রহণের পর তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিজয়ের এই মাসে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সব শহীদ ও সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের বীরত্ব, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’
জামায়াতের নতুন আমির তার বক্তব্যে দলটির সাবেক আমির গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক নেতাদের স্মরণ করেন, যাদের প্রায় প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে।’
বিদায়ী আমির মকবুল আহমাদের অবদান স্বীকার করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি মকবুল আহমাদের প্রতি, যিনি এক কঠিন ক্রান্তিকালে আমিরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আজীবন আমাদের হৃদয়ে অভিভাবক হিসেবে থাকবেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন নজিরবিহীনভাবে একযোগে মহড়া দিয়ে মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। দেশপ্রেমিক জনগণের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো—গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার।’
দেশের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জামায়াতের নতুন আমির বলেন, ‘দেশের মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে বলে অভিযোগ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যার আশু সমাধানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু ভারত অন্যায়ভাবে সে দেশের লোকদের সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। এতে বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন।’
ভারতের বাবরী মসজিদ রায় নিয়েও কথা বলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ সম্পর্কে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা ভারতের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।’
নতুন আমিরের দাবি, ‘জামায়াত তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সংগঠন পরিচালনাসহ গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে আসছে। আমরা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সন্ত্রাস ও চরমপন্থার ঘোরতর বিরোধী।’
জামায়াতের প্রচার বিভাগের এম আলম জানান, শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী আমির মকবুল আহমাদ, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদসহ নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা।
সূত্র, বাংলা ট্রিবিউন