ডা. ফারহানা মোবিন, গলব্লাডার বা পিত্তথলি ছোট্ট একটি থলির মতো। আমাদের লিভার বা কলিজার ঠিক নীচে এর অবস্থান। গলব্লাডার থাকে পেটের ভেতরে এবং ডানদিকে, সংখ্যায় একটি। পিত্তথলির মধ্যে থাকে পিত্তরস বা ‘বাইল’ (ইরষব)। এই বাইল (ইরষব) কে তৈরী করে লিভার। আমাদের খাবার খাওয়ার পূর্বে গলব্লাডার বাইল বা পিত্তরসে পূর্ণ থাকে। খাবার খাওয়া শেষ হলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিটি চুপসে যায়। অর্থাৎ পিত্তরস খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে।
এই পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। আর শরীরে কোলস্টেরল, বাইল সল্ট (পিত্ততে লবনের পরিমাণ বেড়ে গেল, পিত্ত থলিতে পাথরের সৃষ্টি হয়)। এর পরিমাণ বেড়ে গেলে তৈরী হয় গলব্লাডারে পাথর। আমাদের দেহে যে অঙ্গগুলোতে পাথর তৈরী হয়। তার মধ্যে পিত্তথলি হলো অন্যতম।
নাশপাতি ফলের মতো এই অঙ্গটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ থেকে ১০ সে.মি। আর প্রস্থ প্রায় ৩ সে.মি। পিত্তথলিতে কালচে সবুজ রং এর পিত্তরস থাকে। আর প্রতি পিত্তথলিতে পিত্তরস থাকে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মি.লি। ¯েœহ জাতীয় বা চর্বি জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে পিত্তরস।
আমাদের দেহে পিত্তথলির কাজ –
¯েœহ জাতীয় খাবার পরিপাকে প্রত্যক্ষ ও অন্যান্য খাবার পরোক্ষভাবে হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই গলবাল্ডার কেটে ফেললে চর্বি জাতীয় খাবার যতোটা সম্ভব পরিহার করুন।
পিত্তথলির যতেœ আমাদের করণীয় ঃ-
১। প্রতিদিন নিয়মিত প্রায় দুই লিটার পানি পান করুন, এতে পুরো দেহে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল করবে, ফলে গলব্লাডার ও পিত্ত রসও কাজ করবে সঠিকভাবে।
২। ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস, কিডনীর অসুখ, ওজন, রক্তে ইনফেকশনের মাত্রা সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এই অসুখগুলো বেড়ে গেলে পিত্তথলি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারেনা।
৩। যে কোন প্রকার মাদকদ্রব্য, ধূমপান অতিরিক্ত ফাস্টফুড, তেল, মশলা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই এসব বিষয়ে সচেতন হউন।
৪। দীর্ঘ বছর যাবৎ জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী পিল, গর্ভনিরোধক পিল বা যৌনবর্ধক ওষুধ, যে কোন হরমোনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না।
৫। প্রচুর পরিমানে তিতা জাতীয় খাবার এবং শাক-সব্জি খান। আাঁশ জাতীয় খাবার সব মানুষের জন্য ভীষণ উপকারী।
৬। তেল, চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন। এই খাবার গুলোর বাড়তি তৈলাক্ত অংশ পিত্ত থলিতে জমে। দীর্ঘ বছরের পর বছর এমনভাবে তৈলাক্ত বর্জ্য বা কোলস্টেরল জমে গলব্লাডারে পাথর জমা হয। পিত্তরস গুলো সঠিকভাে কাজ করতে পারেনা। তরল পিত্ত শক্ত পাথরে পরিণত হয়। তখন খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে। পরিণামে তখন পেটে ব্যথা হয়। মারাত্মক পরিণতিতে বুকে ব্যাথাও হয়।
৭। পিত্তথলিতে ইনফেকশন হয়ে পুঁজ জমতে পারে। ইনফেকশান হলে জ্বর, জ্বর ভাব, পেটে ব্যাথা হয়, বমিও হতে পারে। মাঝে মাঝে যদি পেটের ডান পার্শ্বে ব্যথা হয় তবে অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হউন। বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেক আপ করান।
৮। প্রতিদিন একটি করে ফল খান। খাবারের তালিকায় মৌসুমী ফল অবশ্যই রাখুন। গলব্লাডার বা পিত্তথলির অপারেশানের পরে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করুন।
৯। তারিখ পার হয়ে যাওয়া কোন খাবার বা ওষুধ খাবেন না। এই ধরনের খাবার বা ওষুধ কিডনী ও লিভারের কার্যক্ষমতা দূর্বল করে দেয়। আর লিভার বা কিডনীর কার্যক্ষমতা কমে গেলে, পুরো দেহে তার প্রভাব পড়ে। গলব্লাডারও সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা।
১০। অনেকের গর্ভাবস্থায় পিত্তথলিতে পাথর হয়ে। এই বিষয়ে খেয়াল রাখুন। বংশগত বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও পাথর হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বেশি বা যারা হঠাৎ করে খুব বেশি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন বা দীর্ঘ সময় যাবৎ না খেয়ে থাকেন, তারাও আক্রান্ত হতে পারেন পিত্তথলির পাথরে। তাই প্রথম থেকেই সচেতন হউন।
ডা. ফারহানা মোবিন,
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার,
স্কয়ার হসপিটাল, ঢাকা।