আমাদের পুরো শরীরে রয়েছে অসংখ্য শিরা উপশিরা। এই শিরা উপশিরাগুলো রক্তনালী। এই নালীগুলোর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। প্রতিনিয়ত এই নালীগুলোর মধ্যে রক্ত সরবরাহ করে হৃৎপিন্ড। হৃৎপিন্ড সারা দেহের জন্য রক্ত সঞ্চালনকারি পাম্প হিসেবে কাজ করে।
পানির মটর যেমন পুরো বিল্ডিং এর পানির পাইপ লাইনগুলোতে পানি সরবরাহ করে, তেমনি হৃৎপিন্ড সারা দেহের রক্ত নালীতে রক্ত প্রবাহিত করে। পানি পান করলে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে। পরিণামে পুরো দেহের সবগুলো অংগে রক্ত পৌঁছাতে সুবিধা হয়।
পানি পান করার জন্য যে সুফলগুলো পাইঃ
(১) রক্তে চর্বির মাত্রা কমে। নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করলে ত্বকের প্রতিটি কোষের মধ্যে পানি পৌঁছে, এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
(২) আমাদের দেহে কিডনী ছাঁকন যন্ত্র হিেেব কাজ করে। নিয়মিত পানি পান করলে কিডনীর কাজ করতে সুবিধা হয়। আমাদের মূত্র থলিতে যে রোগজীবাণুগুলো জমে যায়, পানি পান করার ফলে মূত্রের সাহায্যে রোগ জীবাণু হলে দেহের বাইরে চলে যায়।
(৩) পানি পুরো দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখে। আমাদের পানি শূণ্যতা রোধ করে। দেহে অম্ল ও ক্ষারের সাম্যাবস্থা ঠিক রাখে। রক্তের টক্সিন বা ক্ষতিকর উপাদানগুলোর পরিমাণ কমায়।
(৪) হজম শক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফলে এসিডিটির পরিমাণ কমে। ব্রণ, ত্বকের সমস্যা কমাতে ভূমিকা রাখে।
(৫) ফ্যাটি লিভারের রোগীরা নিয়মিত দুই লিটার পানি খাবেন। পাশাপাশি খাবার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ফ্যাটি লিভার এর রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। লিভারে চর্বি জমে গেলে ফ্যাটি লিভার হয়। এই সমস্যাতে ওজন কমানো ভীষণ জরুরি। নিয়মিত পানি পান করলে পেট ভরে থাকবে, দীর্ঘ সময়, যা পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
(৬) পানি সারা দেহের খাবারের পুষ্টি এবং অক্সিজেন সঠিকভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
(৭) ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে ইনফেকশান হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত পানি পান করলে রক্তের জীবাণু ঘাম ও মূত্রের মাধ্যমে শরীরে বাইরে চলে যায়।
(৮) ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন, তারা পানি এবং পানি জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন। এতে খাবার নিয়ন্ত্রণ কররেও ত্বক ভালো থাকবে।
(৯) পিত্তথলি বা গলব্লাডার কেটে ফেলার পর অনেকের হজম শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। পিত্তথলির অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে নিয়মিত পানি পান করলে কমতে পারে এসিডিটির ঝুঁকি।
(১০) উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত পানি পান করবেন। এতে রক্তনালীগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে। পরিণামে উচ্চ রক্তচাপ কমবে।
(১১) খেলোয়াড়, ব্যায়াম করেন নিয়মিত, নৃত্য শিল্পী বা বাসার বাইরে দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করেন, তারা দেহের পানি শূণ্যতা রোধ করার জন্য নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করবেন।
(১২) ত্বক, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পানির ভূমিকা অপরিসীম। কারণ ত্বক ও চুলের প্রতিটি বিন্দুতে পানি অক্সিজেন পৌছাতে সাহায্য করে।
(১৩) কিডনীর জটিলতায় আক্রান্ত বা ডায়ালাইসিস চলছে, এই ধরণের রোগীদেরকে অনেক সময় মেপে পানি খেতে হয়। এমন অবস্থাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পানি পান করা অনুচিৎ।
ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা