“আমরা এই ধানমন্ডি ৩২ এ দাঁড়িয়ে এই মহানায়কের প্রতি ক্ষমা চাচ্ছি”, হামলার আগে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে বলেন রোকেয়া প্রাচী।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীসহ অনেকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্মরণে আগের রাত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শহীদ বেদীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে শ্রদ্ধা জানান শতাধিক মানুষ।
বিকাল থেকেই সব হত্যার বিচারের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সমানে অবস্থান নেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কয়েকশ মানুষ মোমবাতি নিয়ে আসেন সেখানে।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তৈরি করা ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলায় বেদীতে বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ছবি রেখে তারা এই শ্রদ্ধা জানায়।
মোমবাতি হাতে তাদেরকে স্লোগান দিতে দেখা যায়, ‘এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’, ‘পিতা তোমায় দেখা যায়, লাল সবুজের পতাকায়’, ‘শেখ শেখ শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’।
এর পরপরই একদল যুবককে লাঠি নিয়ে এসে রোকেয়া প্রাচীসহ উপস্থিত কয়েকজনের উপর হামলা করে। তারা রোকেয়া প্রাচীকে মারতে মারতে যুবকেরা ৩২ থেকে বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এর আগে মোমবাতি হাতে নিয়ে রোকেয়া প্রাচী বলেন, “আমরা সবাই আজকে এখানে একত্রিত হয়েছি। কারণ আমাদের বাংলাদেশ পুড়েছে, আমাদের ১৯৭১ পুড়েছে।
“আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি কারণ আমাদের বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়েছে। ধানমন্ডির ৩২ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি বাংলাদেশ পুড়েছে বলে। আমরা এখানে কোনো রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। বাংলাদেশ আমাদের সবার।”
তিনি বলেন, “আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি, আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি। তিনি এই বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। আমরা এই ধানমন্ডি ৩২ এ দাঁড়িয়ে এই মহানায়কের প্রতি ক্ষমা চাচ্ছি।”
গত ৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধানমন্ডির এই বাড়িটি আক্রান্ত হয়, যেটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
লুটপাট আর আগুনের কারণে বাড়িটির দেয়াল ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তৈরি করা বেদী ও তার স্মৃতিস্তম্ভ।
কেবল এই বাড়িটি নয়, সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর যত ভাস্কর্য, ম্যুরাল বা অন্য স্মৃতি স্থাপনা ছিল, তার প্রায় সবগুলোই আক্রান্ত হয়েছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় প্রায় সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় তৈরি করা ছয় শতাধিক ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
রোকেয়া প্রাচী বলেন, “আজকে এই সকল ঘটনায় বাঙালি জাতি লজ্জিত। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করব।
“বঙ্গবন্ধুর ছবি, ম্যুরাল ভেঙেছে, আমরা বঙ্গবন্ধুর হাজার হাজার ছবি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা হাজির হব।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট রাতে এই বাড়িতেই সপরিবারে হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়, দিনটিতে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আসার পর এই ছুটি বাতিল করা হলেও ২০০৮ সালে হাই কোর্টের আদেশে আবার জাতীয় শোক দিবস পালন শুরু হয়।
তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের পতন হওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন হওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকেই জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করা হয়।
রোকেয়া প্রাচী আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাবেন। আওয়ামী লীগের অনুসারীরাও এই বাসভবনে শ্রদ্ধা জানানোর কথা জানিয়েছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
১৫ অগাস্টের এই ঘোষিত জমায়েত নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ১৪ অগাস্ট থেকে চার দিনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ পালনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে মিছিল করছে।