দেড় শতাধিক কনটেইনারে ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসীদের কার্গো মাল নিয়ে জটিলতা।ব্যবসায়ী-গ্রাহকদের মধ্যে ঝামেলা,চিন্তিত ব্যবসায়ীরা প্রায় দিশেহারা।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় দেড় বছর যাবৎ আটকে পড়ে আছে সী কার্গোতে পাঠানো প্রায় ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসীদের মাল।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) কুয়েত সিটির রাজবাড়ী রেস্টুরেন্টে কুয়েত এয়ার এন্ড সি কার্গো সমিতি এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
কার্গো সমিতির নেতৃবৃন্দরা জানান, কুয়েত থেকে যে সকল প্রবাসীরা দেশে পরিবার পরিজনের জন্য গৃহস্থলী আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় মালামাল, কসমেটিকস, ট্যাং, দুধসহ ভোগ্যপণ্য সী কার্গোতে মাল বুক দিয়েছেন, দেড় মাসের মধ্যে মালগুলো পোঁছানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে এখনো বুঝে পাননি তাদের মাল।
ফলে একদিকে কার্গো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাস্টমারদের চলছে ঝামেলা, অন্যদিকে এ ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট শতাধিক প্রবাসী ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন। মাসের পর মাস যেভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে; সেটি পুষিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।
কুয়েতে কার্গো ব্যবসা করছেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা।আর এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় হাজার খানেক বাংলাদেশিরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল প্রেরণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান বেশ সুনামের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে উল্লেখ করে তারা জানান, গত দেড় বছর ধরে হঠাৎ এ ব্যবসায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও গত সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে কার্গোতে পাঠানো মালামাল জটিলতা বিষয়ে জানানো হয়, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরঞ্চ কতিপয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আইপিসিপি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মাল পাঠানো হয়েছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রায় দেড় বছর ধরে আটকে রেখেছেন প্রায় ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসীর মাল।
দেড় শতাধিক কনটেইনার, প্রতি কনটেইনারে ৫ হাজার কেজিরও বেশি মাল, এর মালিক ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসী উল্লেখ করে কার্গো ব্যবসায়িরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এই জটিলতার ফলে এরই মধ্যে অনেক জিনিসপত্রের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে,তবুও প্রবাসীরা তাদের পাঠানো জিনিসপত্র পেতে চান।
কার্গো মালামালের জটিলতা নিয়ে কুয়েতের কার্গো সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ২০২০ সালের দিকে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করেছিলেন।
পরে দূতাবাস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে উক্ত সমস্যা সুরাহার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সেসময়ও সমস্যা সমাধানকপ্লে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
কার্গো ব্যবসায়ীরা আরও জানান, কাস্টমস নিয়ম বহির্ভূত কোনো কাজ তারা করেননি, ভবিষ্যতেও সব কাস্টমস নিয়ম মেনেই তারা কার্গো ব্যবসা পরিচালনা করতে চান।
তবে বর্তমানে চট্রগ্রাম বন্দরে আটকে পড়া প্রায় ৬০ হাজার কুয়েত প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে কেনা মালামাল যেনো দ্রুত মুক্ত করে প্রবাসীদের স্বজনদের পাইয়ে দিতে সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কার্গো ব্যবসায়ীরা বলেন, নিম্ন আয়ের প্রবাসীদের কসমেটিকস, ট্যাং, দুধসহ ভোগ্যপণ্য কখনোই ব্যবসায়িক পণ্য হতে পারেনা এবং এক্ষেত্রে আইপিসিপি করে মাল পাঠানোও তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী কার্গো ব্যবসায়ি সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
কুয়েত এয়ার এন্ড সি কার্গো সমিতি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কার্গো ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বাহার উল্লাহ,মহসিন পারভেজ, আলমগির হোসেন, সারোয়ার আহমদ, বেলায়েত হুসেন, রনি আহমদ, আব্দুস সালাম সহ অনেকে।