জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : তৃণমূল আওয়ামীলীগের সাথে দুঃসম্পর্কই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রাঙ্গুনিয়ার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানদের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন। নৌকায় ডুবেছেন চেয়ারম্যানরা। বর্তমান চেয়ারম্যানদের মাত্র একজনই অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়ার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতীকের মাঝি হয়েছেন। অন্য ইউনিয়নগুলোতে এসেছে নতুন মুখ। হতাশা ও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পরাজিত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পরায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ৫ বছরের উন্নয়ন , জনসেবা সব কিছু ম্লান করে দিয়ে তৃণমূলের ভোটে। পরাজিত কেউ কেউ স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছে। এলাকার অনেকের মত প্রকাশে জানায় তৃণমূলের ভোটে অনেক ইউনিয়নে যোগ্য প্রার্থী আসেনি। এলাকার সাধারন কেউ কেউ তৃনমূলের ভোটের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও বিকল্প প্রার্থীকে বেছে নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নির্বাচিতরা অনেকেই ভোটের আগেই চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন এমন ভাবও দেখাচ্ছেন বলে জানান এলাকার লোকজন। তবে সাধারন ভোটাররা মনে করছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তৃণমূল থেকে নির্বাচিতরা অন্য প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃণমূলের ভোটে কপাল পুড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সমর্থিত রাজা নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মোস্তফা জাহাঙ্গীর, ইসলাম পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুদ্দৌলাহ দুলাল, দক্ষিন রাজা নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক মিয়া , স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন চৌধুরী, মরিয়ম নগর ইউপি চেয়ারম্যান(ভারপ্রাপ্ত)মো. সেলিম পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সেলিম, সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম সরফি, পোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল কবি গিয়াসু।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার পর প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমুলের ভোট প্রক্রিয়া শুরু হয়। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সহযোগিতায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার তৃণমূল ভোটের দায়িত্ব পালন করেন। তৃণমূল ভোটে ভরাডুবি হয়েছে আ’লীগের বর্তমান ৯ চেয়ারম্যানের। তৃণমূল আওয়ামীলীগের সাথে সুসম্পর্কের অভাবই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানদের। এমনটিই মনে করছেন আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকেরা।
গত ১১ এপ্রিল শিলক ইউনিয়নে ইউনিয়ন আ’লীগের বর্ধিত সভায় প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী না থাকায় সর্ব সম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম তালুকদার। পরাজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগে যোগদান করা বর্তমান চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ চৌধুরী আইয়ুব খাঁন মাঠ ছেড়ে দেন । ১২ এপ্রিল পদুয়া আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগে যোগদান করা বর্তমান চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সেলিমও চুপসে যান। ঐদিন কোনো প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী না থাকায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম কবির তালুকদারকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষনা করা হয়। একই দিনে পৌরসভা কার্যালয়ে প্রার্থী নির্ধারনের বর্ধিত সভায় মরিয়ম নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সেলিমও হেরে যান। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন চৌধুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. নুরুল্লাহ’র কাছে পরাজিত হন। রাজা নগরে ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার তৃণমূলের বিপুল ভোটে জয়ী হন। এখানেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মোস্তফা জাহাঙ্গীর পরাজিত হয়। ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগে যোগদান করা বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুদ্দৌলাহ দুলাল পরাজিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন। ১৩ এপ্রিল তৃণমূলের ভোটে সরফভাটা ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম সরফি কম ভোট পেয়ে হেরে যান। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে একক প্রার্থী নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। দক্ষিন রাজা নগর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক মিয়া তৃণমূলের ভোটে হেরে যান। ভোটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আহমদ সৈয়দ তালুকদার আওয়ামী লীগের প্রাথী নির্বাচিত হয়েছেন। পোমরা ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল কবির গিয়াসু উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর কাছে মাত্র ২ ভোটে হেরে যান। শুধুমাত্র পারুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদুর রহমান তালুকদার তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ না থাকাতে বতর্মান চেয়ারম্যানদের কপাল পুড়েছে। ভোটে হেরে যাওয়ায় তাদের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অনিশ্চিকত হয়ে পড়েছে।
কোদালা ইউনিয়নে তৃণমূল ভোটের নির্বাচিত সাবেক ইউটি চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম তালুকদার জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলের কাছে প্রথম পরীক্ষায় পাশ করলেও জনগনের ভোটের পরীক্ষায় পাশ করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি জনগনের সমর্থন আদায় করতে নিজেকে বিলিয়ে দেব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী জানান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। যেসব প্রার্থীরা দলের দুর্দিনে হাল ধরে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তারাই বিজয়ী হয়ে নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।