বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে আলোচক ও দর্শকদের অনেকেই বলেছেন দেশের বর্তমান রাজনীতি তরুণ প্রজন্মের আশা আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারছেনা।
তবে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলছেন তরুণদের অন্তর্ভুক্ত রেখেই পরিকল্পনা প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে ।
সংলাপের এ পর্বটি ছিল বাংলাদেশ সংলাপের এবারের মৌসুম অর্থাৎ থার্ড সিজনের শেষ পর্ব।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় টিসিবি মিলনায়তনে এ পর্বটিতে শিক্ষার মান এবং উদ্ভাবনে তরুণরা সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছে কি-না এমন বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে।
এ পর্বে আলোচক ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রৗ ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহরিয়ার আলম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র ড: আসাদুজ্জামান রিপন, গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং বেসরকারি সংগঠন মায়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহানা সিদ্দিকী।
একজন দর্শক জানতে চান যে বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে তা তরুণ প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা এবং আশা আকাঙ্ক্ষাকে কতটা ধারণ করতে পারছে ?
জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন সরকার তরুণদের প্রয়োজন বা চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়েই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্তগুলোতে তার প্রতিফলন ঘটছে।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারেই তরুণদের কথা চিন্তা করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে এসেছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এটি কি প্রমাণ করেনা যে সরকার তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করেই রাজনীতি করছে”?
তবে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন দেশে যে স্টাইলের রাজনীতি চলছে তাতে তরুণ সমাজের আশান্বিত হওয়ার কারণ নেই। এ অবস্থা থেকে যে কোন মূল্যে উত্তরণ ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “রাজনীতি একেবারে পচে গলে গেছে। এটা থেকে উত্তরণের মূলত দায়িত্ব রাজনীতিকদের। রাজনীতিকরা যেভাবে কথা বলে হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি করেন তার জন্যে কি তরুণরা প্রস্তুত ?”
এ বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে উপস্থাপক দর্শকদের কাছে জানতে চান বর্তমান রাজনীতি তরুণ প্রজন্মের আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারছে কি-না ।
জবাবে ১৪০ জন দর্শকের মধ্যে মাত্র তিন জন রাজনীতি তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে বলে জানান।
একজন দর্শক বলেন, “আমার ২২ বছর বয়স অথচ আমি ভোট দিতে পারিনি। আমাদের যে রাজনীতিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা এটি তার লক্ষণ”।
আরেকজন বলেন, “বর্তমানে রাজনীতিতে তরুণরা ভূমিকা রাখছেনা বা তাদের ভূমিকা রাখতে সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন দেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে ব্যবহারের একটি নেতিবাচক প্রবণতা অনেকদিন ধরেই চলছে।
তিনি বলেন, “কিছু কর্মসূচি আছে যেগুলো তরুণদের এগিয়ে দিচ্ছে আবার একি সময়ে মিছিল সমাবেশের মতো রাজনীতিতে তরুণদের ব্যবহারের প্রক্রিয়া আছে”।
অপর আলোচক প্রযুক্তি বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন মায়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহানা সিদ্দিকী বলেন তরুণদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয় কিন্তু কোন কিছুতেই তরুণদের সমস্যাগুলো বা তারা কি চায় তার কোন প্রতিফলন নেই।
তিনি বলেন আমরা সবসময়ই বলি সরকার কতটুকু করছে কিংবা করছে না। কিন্তু নিজের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানানোর একটি বিষয় আছে কিন্তু সেখানে জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে”।
আরেকজন দর্শক জানতে চান বাংলাদেশে শিক্ষার স্তরগুলোতে যে মান রয়েছে তা ভবিষ্যতে দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে ?
জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন শিক্ষার বর্তমান মান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্যে যথেষ্ট নয়। তবে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেরুচ্ছেন তাদের মান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে খুব একটা এগুতে পারেনি।
সংলাপের এ পর্বের মাধ্যমেই শেষ হলো বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের এবারের মৌসুমটি।