
“শুধু জামায়াত না, যারা ইন্ডিয়ায় যেতে পারেনি তারা সকলেই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বাকিদের প্রসঙ্গ আসে না। আমাদের প্রসঙ্গটা আসে,” বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী ‘বাধ্য হয়ে’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, কেবল জামায়াত নয়, যারা ভারতে ‘যেতে পারেনি’ তাদের সবাই একই কাজ করেছে। কিন্তু তাদেরকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না।
পূর্ব লন্ডনের যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষী সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে বুধবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শফিকুর বলেন, “ইয়েস, জামায়াতে ইসলামী ওয়ান পাকিস্তানের পক্ষে সাপোর্ট দিয়েছিল। এটা রাজনীতিতে অপরাধ না। তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।”
একাত্তরের প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “এক কোটি মানুষ ভারতে গেলেও আমাদের যাওয়ার জায়গা ছিল না।
“জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সে সময় দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ‘সুযোগ ছিল না। শুধু জামায়াত না, যারা ইন্ডিয়ায় যেতে পারেনি তারা সকলেই পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “কিন্তু বাকিদের প্রসঙ্গ আসে না। আমাদের প্রসঙ্গটা আসে। কারণ, বাকি দলগুলো নিজেদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতির সামনে নিজেদের অবস্থানটা তুলে ধরতে পারেনি, রাজনীতিতে তাদের অবস্থানটা উল্লেখযোগ্য না। তাদেরকে কেউ মাথাব্যথা হিসেবে নিচ্ছে না। সাবজেক্ট হিসেবে থেকে গেল জামায়াতে ইসলামী।”
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছিল বলে দাবি করেন জামায়াত আমির। বলেন, “মওলানা ভাসানী সাহেব, বাংলাদেশের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি কিন্তু ভারতে গিয়েছিলেন যুদ্ধ করার জন্য; চারদিনের বেশি থাকতে পারেন নাই, তার জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি বাধ্য হয়েছিলেন ফিরে আসতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। কারণ, তার নামের আগে মওলানা ছিল।
“তিনি কিন্তু সে অর্থে কোন মাদ্রাসায় পড়ুয়া মানুষ না। চর্চা ছিল তার ইসলামের ওপরে কিছুটা। তার বেশভূষা ছিল মুসলমানদের মত। তিনি একটি বিশেষ কায়দার টুপি পরত আর খদ্দরের পাঞ্জাবি পরত। তার সহকর্মীরা তাকে মওলানা বলে অভিনন্দিত করত এবং তিনি সেটাতে কমফোর্ট ফিল করতেন। সেই লোকটাকে ভারত সহ্য করে নাই আর আমারে সহ্য করত? আমি অবশ্য তখন ১২ বছরের শিশু, আমার কথা বলছি না।
আমি বলছি এ রকম যারা আছেন, তাদের বিষয়ে তো করত না। তাদের কোনো জায়গা সেখানে ছিল না।”
মুক্তিযুদ্ধে ভারত প্রসঙ্গ
মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ভারতের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন জামায়াত আমির। বলেন, “ভারত যদি খোলা মনে এটার (সবাইকে ভারতে যাওয়া) সুযোগ করে দিত তাহলে জাতিটা ইউনাইটেড থাকত। এ জাতির মধ্যে কোনো ডিভিশন আসত না। কিন্তু ভারত এটা না দেওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে এরা অসহায় এখানে পড়ে গেছে।
শেখ মুজিব সাহেব যেমন, তার কিছুই করার ছিল না। তাকে বন্দি করে নিয়ে গেল পাকিস্তানে। আমাদেরও (জামায়াতে ইসলামী) কিছুই করার ছিল না, থেকে গেলাম এখানে।”
পাকিস্তানিরা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল মন্তব্য করে শফিকুর বলেন, “এটা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ইনভাইট করে আনে নাই। ভুট্টো সাহেব তার একগুঁয়েমির কারণে পাকিস্তানকে একটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন, সেখানে ইয়াহিয়া খান তার কাছে কার্যত অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণের এর বাইরে কিছু করার ছিলও না তখন এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া।”
যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কী কথা
মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “কিন্তু যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, যেমন মানুষ খুন করেন, কারও বাড়িতে আগুন দিয়ে থাকেন, কারও সম্পদ লুণ্ঠন করেন, কারো ইজ্জতের ওপরে হাত দেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত।”
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অপরাধে জড়িত ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব দেশ শাসন করেছেন পৌনে চার বছর। সেখানে ৪২ হাজার মামলা হয়েছে। কিন্তু যাদেরকে ওয়ার ক্রাইম ট্রাইবুনালের নামে বিচার করা হয়েছে তাদের কারও তো নাম ছিল না। কোথাও একটা জিডি একমাত্র ইউসুফ সাহেবের নাম ছিল। সে শেখ মুজিব সাহেব জীবিত থাকার সময় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে শফিকুর বলেন, “তাহলে ৪২ বছর পর এ মামলার গ্রাউন্ড কীভাবে তৈরি হল?
২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়ার প্রসঙ্গে তার দাবি, তারা শাসন ক্ষমতার একটা ‘ছোট্ট অংশীদার’ ছিলেন।
সূত্র, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম