ইতিহাসের বাঁক বদল নাকি পুরুষতান্ত্রিকতারই জয়- এই প্রশ্নে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিনিরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। ফলে সময় যত ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনার পারদ তত উপরে উঠছে। বিশ্ববাসীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন কে?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসই কি ইতিহাস গড়বেন নাকি খ্যাপাটে স্বভাবের ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরবেনÑ তা জানতে উদগ্রীব সবাই। কমলা যদি উতরে যান, তবে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ও দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার জয়ের পথে লিঙ্গবৈষম্য ও জাতিগত বৈষম্য বড় বাধা হয়ে আছে।
শেষ মুহূর্তের প্রচারে শুক্রবার ব্যাটলগাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলো চষে বেড়ান ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। কমলা হ্যারিসের প্রচারে একাধিক তারকা অংশ নেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও থেমে নেই। তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে শেষ সময়ের একটি জরিপে কমলা শিবিরে স্বস্তি এসেছে। বাংলাদেশ সময় শনিবার প্রকাশিত গার্ডিয়ানের জাতীয় পর্যায়ের এই জরিপে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তবে সাত ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যের চারটিতেই এগিয়ে ট্রাম্প।
জরিপ অনুসারে, জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ৪৮ ও ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। তবে ব্যাটলগ্রাউন্ড যেসব অঙ্গরাজ্য এবারের নির্বাচনে ব্যবধান গড়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে আছেন চারটিতে। কমলা হ্যারিস এগিয়ে আছেন তিনটিতে।
এদিকে ট্রাম্প যদি ২০২০ সালের মতো এবারও আগাম জয় দাবি করেন, তবে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী শিবির ও দলীয় কর্মকর্তারা সেই প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও দ্যা গার্ডিয়ান অনলাইনের।
ট্রাম্প এ সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, তার আশা, ভোটের দিনই নিজের জয়ী হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করতে পারবেন তিনি। যদিও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে যদি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় ভোট পুনর্গণনার দাবি ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো নির্বাচনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেওয়া ভোট গণনার তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা। যদিও কখনো কখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই প্রার্থীরা নিজেদের বিজয়ী দাবি করে বসেন। এ বিষয়ে বুধবার এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে হলেও আমরা প্রস্তুত। যদি ট্রাম্প বিজয় দাবি করেন এবং আমরা জানতে পারি আমরাও জবাব দিতে প্রস্তুত।
কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও কমলার নির্বাচনী শিবিরের ছয়জন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প যদি আগাম জয় ঘোষণা করেন, তবে প্রাথমিক লড়াই হবে জনগণের আদালতে। তাদের পরিকল্পনা, সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে বিজয়ীর নাম ঘোষণার আগে সব ভোট গণনার জোরালো দাবি জানাবেন। নাম প্রকাশ না করে কমলার নির্বাচনী প্রচারশিবিরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের পূর্ণ বিশ্বাস, ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতেই নিজের জয় দাবি করবেন, আর তা সব ভোট গণনা হওয়ার আগেই। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আগে এটা করে ব্যর্থ হয়েছেন। যদি আবারও করেন, ব্যর্থই হবেন।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ভোটের পরদিন সকাল-সকালই নিজের জয় দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। অথচ ভোটের তিন দিন পর প্রথম টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়। ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্প কখনো তার সেই পরাজয় মেনে নেননি; বরং এখনো দাবি করেন, ভোট কারচুপি করে তাকে হারানো হয়েছে। এ নিয়ে দাঙ্গার মতো ঘটনাও ঘটে। ওদিকে নির্বাচনের শেষ সমেয় শ্রমিক ইউনিয়নগুলোয় নির্বাচনী প্রচারের জন্য পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক (ভলান্টিয়ার) খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কমলা হ্যারিসকে।
কমলা হ্যারিস থুলসেন্দ্রপুরম গ্রামে প্রথম গিয়েছিলেন পাঁচ বছর বয়সে। এরপর ২০০৯ সালে নিজের মায়ের দেহাবশেষের ছাই নিয়ে আবারও চেন্নাই যান। এরপর আর ভারতে আসা হয়নি তার। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও গ্রামটির কথা কোথাও উল্লেখ করেননি তিনি।
এ বিষয়টি নিয়ে গ্রামটির মানুষ কিছুটা ব্যথিত। তবে তা সত্ত্বেও যদি কমলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং গ্রামটির কথা একবার উল্লেখ করেন তাহলে সবাই খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন এক নারী। বর্তমানে গ্রামটিতে কমলা হ্যারিসের কোনো আত্মীয় স্বজন থাকেন না। তবে সেখানকার একটি মন্দিরে তার নানার নাম রয়েছে।