আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে প্রকৃতি। ছোট কাল থেকেই আমি প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠেছি। ঘুম থেকে জেগে উঠা, জেগে উঠে প্রকৃতির সাথে আমার লীলা। প্রকৃতি সাথে করেই আমার ঘুম । এভাবেই আমার জীবন চলেছে । প্রকৃতির সাথে মিশে সারা দিনমান একাকার হওয়া । প্রকৃতির সাথে গান গাওয়া । প্রকৃতির কাছে আমি ঝনি। এখন আমার বয়স হয়েছে অনেক। কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক মোঃ আব্দুল হক ।
বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বড়গাছি কৃষক ঐক্য, মাধবপুর নারী সংগঠন যৌথভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৭ উপলক্ষ্যে আজ ( ০৪ মে ২০১৭) সোমবার বড়গাছি বিএডিসি সাব সেন্টার হল রুমে “ প্রাণ ও প্রকৃতির রক্ষায় গ্রামীণ জনগণ ” শীর্ষক আলোচনা সভায় বড়গাছি ইউনিয়নসহ পবা উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। “প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে আমাদের বসবাস” শ্লোগানে উক্ত আলোচনা সভায় পবা উপজেলার কৃষক, জেলে, তাঁতী, কামার, কুমাড়, ব্যবসায়ী, শিল্পী, নাট্যকার , বাউল, সাধক, নাট্যকার, সূত্রধর, সাংবাদিক, মাঝি, জেলে,কবিরাজসহ সকল পোশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীগণ বলেন জলবকায়ু পরিবর্তন হচ্ছে । তবে সেই পরিবর্তন রুখে দেয় আমার প্রকৃতি। প্রকৃতিই আমাদের সকল ধরনের দূর্যোগ থেকে রক্ষঅ করে। সেই প্রকৃতি রক্ষায় আমরাই কাজ করি । বড়গাছি কৃষক ঐক্যের সদস্য মোঃ জব্বার মিয়া বলেন- “ সেই প্রাচীন কাল থেকে বীজ আমাদের মা ,আমাদের দেশীয় বীজ আমাদের টিকিয়ে রেখেছে। তিনি আরো বলেন- কতো বীজ আসে (কোম্পানীর), কতো বীজ যায়ঢ , আমাদের বীজের মতো সহ্য ( স্থানীয় আবহওয়া ও পরিবেশ সহনশীল) করার মতো বীজ আর পাইনা। আমরা এখন বীজ সংরক্ষণ কির। নিজেরা বীজ বিনিময় করি। প্রকৃতি সংরক্ষণ করি। প্রকৃতি ও বীজ আমার মা, তাকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
নাট্য ব্যক্তিত্ব মোঃ মজিবুর রহমান বলেন-“ প্রকৃতির সাথে সাংস্কৃরি সম্পর্ক সৃষ্টি থেকেই ।সংস্কৃতি আমদের মননশীলতা শেখায় । এই সংস্কৃতি চর্চা যতো প্রসার পাবে ততো প্রকৃতির প্রতি মানুষের মায়া বাড়বে। সংস্কৃতি চর্চা ব্যতীত স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন কখনোই আশা করা যায় না। আমরা সংস্কৃতির ভেতর দিয়েই প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার লড়াই কওে যাচ্ছি। বড়গাছি লোক সাহিত্য পরিষদেও আহবায়ক রায়হান জুয়েল বলেন- আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এ পর্যন্ত চারবার গম্ভীরার আয়োজন করেছি। হাজার হাজার লোক প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ছে।বড়গাছি কৃষক ঐক্যেও সভাপতি ও চারবার রাষ্ট্রীয় কৃষি পদ প্রাপ্ত মোঃ রহিম উদ্দিন বলেন- নানা ভাবেই আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে । আমাদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বারনাই নদী আজ মৃত প্রায় । হাজার হাজার মাঝি, জেলে আজ পেশাহীন হয়ে পড়েছে। শহরের দূষিত পানি ডুকে যাবার ফলে নদী পানি দুষণ হয়ে যাচ্ছে। রোগবালাই বেড়ে গেছে। তিনি সরকারের কাছে বারনাই নদী রক্ষায় জরুরীভাবে উধ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
বড়গাছি কৃষক ঐক্যের নারী সদস্য মোছাঃ রহিমা বেগম বলেন- জলবায়ু পরিবর্তনে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের কারনে নারীদের সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত গরমের কারনে নারীদেও বেশী রোগবালাই হচ্ছে। চর্মরোগ অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েরা বন্ধাত্ব হয়ে যাচ্ছে।” তিনি জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর জন্যে আলাদা সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সরকারের কাছে দাবি করেন।
আলোচনায় মাধবপুর আদর্শ নারী সংগঠনের সভাপতি মোছাঃ মনিরা বেগম বলেন- “ আমরা থেমে নেই। পরিবর্তনের সাথে মোকাবেলা করে টিকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তুৃ এই টিকিয়ে থাকাই সব কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যে যারা বেশী দায়ি তাদেও এই ক্ষতি পুরণ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের দিকগুলো থেকে তাদের সড়ে আসতে হবে।
আলোচনা সভাটি স ালনা করেন বড়গাছি কৃষক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রায়হান কবির জুয়েল। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বারসিক এর কার্যক্রম দিকগুলো তুলে ধরেন বারসিক এর বরেন্দ্র অ ল সমন্বয়কারী ও গবেষক মোঃ শহিদুল ইসলাম।
জলাবয়ু পরিবর্তনে বিকল্প ধারা কি তা আমাদের ভাবতে হবে। গ্রামের মানুষের সমস্যাগুলো আপাতঃদৃষ্টিতে অনেক ছোট মনে হলেও তা আমাদের বৃহৎ উন্নয়নের অন্যতম অংশ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু বড় বড় পরিকল্পনা করলেই হবে না। গ্রামের মানুষের ছোট ছোট সমস্যার দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। তাই অ ল ভেদে পরিকল্পনা এবং প্রয়োগও হতে হবে আলাদা। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সব এলাকাগুলোকে একভাবে দেখলে ফলাফল আশানুরুপ হবার সম্ভাবনা একেবারেই কম। অংশগ্রহণকারীগণ বরেন্দ্র অ লের খরা, শীত ও গরমের তারতম্যের দিকগুলোসহ পানি সংকটের দিকগুলো বিবেচনায় প্রকল্প এবং সকল কর্মসূচী নেবার দাবি করেন। এসডিজির গোল অর্জন করতে হলে অ লভিত্তিক সমস্যাগুলো অনেক বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্যে সত্যিকারে কমিউনিটির অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী । তাহলেই স্থায়ীত্বশীল সম্প্রদায়ের ভীত সত্যিকারেই স্থায়ীত্বশীল হবে। একই সাথে এসডিজির সকল গোল পরিপূর্ণতা পাবে।
উক্ত মতবিনিময় সভায় সকল শ্যেণী পেশার প্রায় ৬০জন নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিবেদন
শহিদুল ইসলাম
আ লিক সমন্বয়কারী, বারসিক বরেন্দ্র অ ল