মুক্তমত : আমি এতো অপদার্থ সন্তান, যে রাজশাহীতে যেয়ে আমার পিতার কবর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহীর টিকাপাড়া কবরস্থানে গেলাম।
চারিদিকে রাস্তাঘাট বাড়ীঘর সব বদলে গেছে। পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন। আমার বুক ফেটে কান্না আসলো। আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম।
কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি একা কবরস্থানে। নিজেকে আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। এতো কবরের ভীড়ে আমি কোথায় সেই কবর খুঁজে পাবো ?
চোখের পানি আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। মনে হচ্ছিল , আমার পিতা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “মা, এতো বছর পরে আমাকে দেখতে আসলা, আমার কবর খুঁজে পাচ্ছো না কেন ? এই যে আমি তোমার পাশে।”
হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে, আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলাম। বুক ভরা হাহাকার আমার চোখের পানি হয়ে ঝরতে শুরু করলো।
হঠাৎ এক অপরিচিত বৃদ্ধ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “মা তুমি কি এই শহরে নতুন এসেছো ?”
আমি বললাম, ” দীর্ঘ ছয় বছর পরে এই শহরে এসেছি।”
তিনি বললেন, “মা তাড়াতাড়ি এই কবরস্থান থেকে চলে যাও। আর কিছু সময় পরে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। নেশাখোর ছেলেদের অনেকেই আশেপাশে থাকে। তুমি মেয়ে মানুষ। আর কোনদিন কবরস্থানে একা আসবা না। ”
তিনি চলে গেলেন। আমি কবর খুঁজে পেলাম না। সব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া করলাম। মন মানছিল না। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে সন্ধ্যা হতে শুরু করলো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। কবর খুঁজে পেলাম না। পুরো কবরস্থানে অনেক পরিবর্তন।
চোখের পানি মুছতে মুছতে কবরস্থান থেকে চলে আসলাম।
লেখক:
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক (অগ্রদৃষ্টি নিউজ পোর্টাল)
প্রধান সম্পাদক- কুয়েত বাংলা নিউজ (kuwaitbanglanews.com)