গ্রামীণ ব্যাংকের মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা শাখার ব্যবস্থাপককে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় গ্রাহকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের পর বিষয়টির ‘সমাধান’ করার দাবি করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে ভাই সম্বোধন করায় এক গ্রাহকের প্রতি অসন্তুষ্টি জানাচ্ছেন অন্য এক কর্মকর্তা। তিনি সেই গ্রাহককে ‘স্যার’ বলতে বলেন। এটাই ‘নিয়ম’ এই কথা বলার পর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেই গ্রাহকের ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পরে জানা যায়, এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সেই শাখার সেকেন্ড ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।
ঝিটকা বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী সমর সন্ন্যাসীর ছেলে সুব্রত সন্ন্যাসী বুধবার ওই শাখায় যান। তার সঙ্গে এই বাদানুবাদের আলোড়ন তুলেছে এরই মধ্যে।
তবে যাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত সেই শাখা ব্যবস্থাপক অদ্বৈত কুমার মৃধা বলছেন, “গ্রাহকের সঙ্গে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়টি গ্রামীণ ব্যাংকের দুইজন বিভাগীয় প্রধান, জোনাল প্রধান ও এরিয়া প্রধানকে নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে বসে সমাধান হয়ে গেছে।”
কী সমাধান হল, সে প্রশ্নে তিনি জবাব না দিলেও সুব্রত সন্ন্যাসী বলেন, “এ ঘটনার জন্য সেকেন্ড ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”
সুব্রতের মোবাইল ফোনে করা এ ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যাংকের ওই শাখায় আলাপচারিতার একপর্যায়ে সুব্রত সেকেন্ড ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদকে বলছেন, ‘সম্মান দিয়ে ভাই বলা কি অপরাধ? আপনাদের ভাই বলা যাবে না? স্যারই বলতে হবে?”
উত্তরে আবুল কালাম বলছেন, “ভাই বলা যাবে না, স্যার বলবেন। আপনি ভদ্রতা দেখান। গ্রামীণ ব্যাংকের সবাইকে স্যার বলতে হবে।”
সুব্রতের প্রশ্ন “কেন?” প্রতি উত্তরে আবুল কালাম বলেন, “এটাই নিয়ম; এটা সবাই বলে।”
পরে গ্রাহক পাল্টা প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, “আপনি এত তর্ক করেন কেন? আপনার কোনো সম্পর্কের ভাই উনি (ব্যবস্থাপক)?”
পরে সুব্রত সন্ন্যাসীর দিকে আঙুল তুলে ‘কথাবার্তা সাবধানে বলার হুমকি দেন’ আবুল কালাম।
সুব্রত আঙুল নামাতে বললে আবুল কালাম তার প্রতি মারমুখী হয়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেন ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সুব্রত সন্ন্যাসী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি টাকা তুলতে ঝিটকা গার্লস স্কুল সংলগ্ন ব্যাংকে যান। পরে তাকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে বিকালে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়।
কিছুক্ষণ পর তাকে টাকা তোলার জন্য পরের দিন আসতে বলা হয়।
সুব্রত সন্ন্যাসীর ভাষ্য, “তখন আমি ব্যবস্থাপককে ভাই সম্বোধন করে আগামীকাল কখন আসব তা জানতে চাই। এটি বলার সঙ্গে সঙ্গে সেকেন্ড ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ম্যানেজারকে ভাই না বলে স্যার সম্বোধন করতে বলেন।
“তখন তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলে তিনি আমার দিকে আঙুল তুলে কথা বলেন এবং মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করা সুব্রত সন্ন্যাসী বলেন, ছোট সময় থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার মিষ্টির দোকানে বাবাকে সময় দেন। তার বাবা গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে ব্যবস্থাপককে ‘স্যার’ বলেন। তবে ছেলে হিসেবে তিনি স্যার না ডাকায় এমন ঘটনা মানতে পারেননি। এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে সেজন্য প্রতিবাদ করেছেন তিনি।
পরে ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতাসহ আবুল কালাম আজাদ তার সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান করেছেন জানিয়েন সুব্রত সন্ন্যাসী।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সূত্র, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম