বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীসহ দেশের সর্বত্রই ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্লগার, প্রকাশক ও দেশি-বিদেশি নাগরিক এমনকি সর্বশেষ পুলিশ হত্যাকান্ডের পর অবনতিশীল পরিস্থিতির উন্নয়নে আইনশৃংখলা বাহিনীকে গুলি করে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশের পর কোনো উন্নতি হচ্ছে না। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন গুলি করে, শক্তি প্রয়োগ করে পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য মূল কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজন সকল মহলের সাথে সমঝোতা। পুলিশকে সরকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ চিহ্নিত করে পুলিশকে পুলিশের মতো কাজ করতে দিলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, ‘সরকার সব জায়গায় একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। সে কারণেই দলীয়ভাবে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, এমপিরা এ নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন সে বিধান করা হয়েছে।’ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের মানুষ এখনো পুরোপুরি দিশেহারা হয়নি, তবে অতিষ্ঠ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। আর গণগ্রেফতারের নামে যে গণবাণিজ্য হচ্ছে সেটাও এখন আর গোপন নয়।’ তিনি সরকারকে এ সব বন্ধের আহ্বান জানান। সরকারের উদ্দেশে হান্নান শাহ বলেন, ‘এসব করে লাভ হবে না। ইয়াজিদ, নমরুদ টিকতে পারেনি। আপনারাও টিকতে পারবেন না। তাই আসুন বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনা করে চলমান সমস্যার সমাধান করি।’ গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ৭ নভেম্বর জাতীয় সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। : রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার গুলি করে সর্বশক্তি প্রয়োগ করলে মনে রাখতে হবে, শক্তি প্রয়োগের ফলাফল সব সময় ভালো হয় না। এতে করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা সহ সংঘাত-সহিংসতা আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস দমনে আমেরিকা হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে। বিভিন্ন দেশে শক্তি প্রয়োগ করেছে। লাভ হয়নি, বরং সন্ত্রাসবাদ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকার ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তা না হলে পরিণাম আরও ভয়াবহ হবে। হয় তো আমরা একদিন এমন জায়গায় চলে যাব, যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হবে না। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সত্যিকারের অপরাধী এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের সর্বত্র সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই শুধু বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। : এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার একদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও অন্যদিকে অবিবেচিত সিদ্ধান্ত নেয়ায় কোনো কাজ হচ্ছে না। আইনশৃংখলা বাহিনীর ওপর আস্থা ও জনগণের সহায়তা আনতে হলে এ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা প্রয়োজন। পুলিশের ওপর হামলা সত্যিই অস্বাভাবিক ঘটনা। মনে হচ্ছে তারা নিজেরাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশ যদি নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহলে জনমনে আতংক আরও বাড়বে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হবে যে যাদের কাজ নিরাপত্তা দেয়া তারাই নিরাপত্তাহীন। তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, আসল কাজের পরিবর্তে নকল কাজের পেছনে পুলিশ দৌড়ানোর কারণে তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের উচিত রাজনৈতিক কারণে অহেতুক যেসব মামলা হচ্ছে তার পেছনে না দৌড়িয়ে প্রকৃত অপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করা। ড. শাহদীন মালিক বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাববলয় থেকে মুক্ত থেকে দেশের, দেশের মানুষের এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেশাগত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পুলিশকে পুলিশের মতোই কাজ করতে দিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার আশংকা থেকেই যাবে। : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এ প্রসঙ্গে দৈনিক দিনকালকে বলেন, পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। কিন্তু দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পারছে না। এমনকি পুলিশের ওপর হামলা হলেও গুলি করতে পারছে না। এমনকি এসময় নাকি তাদের বন্দুকে গুলিও থাকে না। পুলিশ জঙ্গিদের ধরতেও পারছে না। বরং ঘটনার পর সরকার থেকে অনুমাননির্ভর বলে দেয়া হচ্ছে কে বা কারা ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর এতে তদন্তের ক্ষতি হচ্ছে। উপর থেকে এ ধরনের অনুমাননির্ভর মন্তব্য করার পর তদন্ত কর্মকর্তারা বিব্রত হয়ে উপরের নির্দেশনা তামিল করতে সাজানো তদন্ত করতে হচ্ছে।