রাঙ্গুনিয়ায় আপন তালতো ভাইকে (ছোট ভাইয়ের সালা) খুন করে খুনের কথা অকপটে স্বীকার করেছে মো. ইউনুস মিয়া নামে এক ব্যক্তি। উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বাসন আলীর বাড়িতে মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তি একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ঘাগড়া খিলমোগল আবিদ পাড়া এলাকার মৃত এজলাছ মিয়ার পুত্র আব্দুল আজিজ (৩৫)। সে ১নং ওয়ার্ডের বেরিবাঁধ এলাকায় মোহাম্মদ হোসেনের (ননা মিয়া) ফার্নিচারে দোকানে পালিশ মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতো। এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকালে নিহত আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ হোসেনের দোকানে প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে করে রাতে তার শ্বশুড় বাড়ি যায়। যাওয়ার সময় রাতে দোকানে থাকবে বলে মালিককে বলে যায়। শ্বশুড় বাড়িতে রাতে ভাত খেয়ে ১০টার দিকে মোবাইলে একটা মিসড কল পেয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে বলে জানায় তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম। রাত ২টার দিকে বাসন আলী বাড়ির ইউনুসের ঘরে নক করতে থাকে নিহত আজিজ। এদিকে দরজার ঐপাশে কে বা কারা এভাবে বিগত ৩দিন ধরে নক করতে থাকায় ছুরি হাতে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ইউনুস। তাই প্রতিদিনের মতো দরজায় নক করায় দরজা খুলেই ছুরিঘাত করে ইউনুস। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে ইউনুস স্থানীয়দের ডাকে এবং মুঠোফোনে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের খুনের বিষয়ে জানায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে নিজ ঘর থেকে আটক করে এবং লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।
হত্যাকারী ইউনুসের স্ত্রী আমেনা বেগম জানায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার জন্য তার স্বামী ইউনুস রিক্সা চালানো ছেড়ে উপজেলার আগুনিয়া চা বাগানের পাশের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিল। চাষাবাদের প্রয়োজনে তারা দু’জন প্রায়ই জমির পার্শ্বে অস্থায়ী নির্মীত ঘরে থাকতো। এদিকে ঘরে একা থাকতো ১০ মাস ধরে স্বামী পরিত্যক্ত কন্যা নাসিমা আক্তার (২০) ও তার ছোটা ভাই। মা-বাবার অনুপস্থিতে বেশ কদিন ধরে ঘরের দরজায় টুকা দিয়ে কে বা কারা মেয়েটিকে উত্যক্ত করতো। মাকে এমন অভিযোগ দিয়ে আসছিল মেয়ে নাসিমা। মেয়ের কথা শুনে সোমবার দিন রাতে সে ও তার স্বামী ইউনুস ঘরে এসে রাত ২টায় দরজায় টুকা মারলে চুর/ডাকাত ও বখাটে ভেবে আমার স্বামী ছুরিকাঘাত করলে সে ঐখানেই মারা যায়। নিহত আব্দুল আজিজ তার দেবরের সালা (বউয়ের ছোট ভাই) বলে জানায় আমেনা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম কা ন জানায়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঘটনার দিন রাতে আমি চট্টগ্রাম শহরে ছিলাম। রাত ২টায় ইউনুস ও স্থানীয়রা ফোনে খুনের বিষয় জানালে আমি পুলিশে খবর দিলে তারা ইউনুসকে ঘর থেকে আটক করে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মোহাম্মদ ইসলাম জানায়, খুনের সাথে জড়িত ইউনুসকে আটক করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে খুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।