জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা চা বাগান সবুজের সমারোহে ভরে গেছে। চলমান বর্ষা মৌসুমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে চা গাছে নতুন পাতা গজিয়ে উঠতে শুরু করায় চা বাগানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারা যাবে বলে জানান চা বাগান কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রায় ৬ শতাধিক কর্মচারী এ বাগানে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় এনজিও ব্রাক চা বাগানটির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে সরকারী রাজস্ব খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিগত মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব প্রদান করে দেশের প্রথম এই বাণিজ্যিক চা বাগানটি। এছাড়াও কর্ণফুলীর বাঁকে সবুজ পাহাড় বেষ্টিত বাগানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ও বর্তমানে চা বাগানের কঁচি পাতাগুলো সবার দৃষ্টি কাড়ে।
জানা যায়, ব্রিটিশরা কর্ণফুলী নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বিস্তীর্ণ জায়গা দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই থেকে ১৮৯৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার ১৯৭৬ সালে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দিয়ে চা-বাগানটি ছেড়ে দেন। এর মধ্যে প্লান্টার্স বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কোদালা চা-বাগান পরিচালনা করছিল। পরে লোকসানের মুখে ১৯৯৩ সালে প্লান্টার্স বাংলাদেশ থেকে আনোয়ারা গ্রুপ চা-বাগানটি লিজ নেন। তারাও লাভের মুখ না দেখায় ২০০৪ সালের ৭ অক্টোবর কোদালা চা বাগানের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্রাক। বর্তমান কোদালা চা বাগানে ৩শ ৩৬ হেক্টর জায়গায় চা চাষ করা হয়েছে। কোদালা চা-বাগানের পাতা সারা দেশে মানের দিক দিয়ে নিজের অবস্থান শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
কোদালা চা বাগান সুত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে ৩৪৬ কেজি চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। বিগত বছরে লক্ষ্যমাত্রা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় চলতি অর্থ বছরে ৪ লাখ কেজি পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
কোদালা চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল মাহমুদ জানান, দেশের ১৬২ চা-বাগানের মধ্যে বিগত বছর প ম অবস্থানে ছিল কোদালা চা বাগান। বর্তমানে মানগত দিক থেকে কোদালা চা-বাগান দশম অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে আগামী অক্টোবরে ২৫ একর চা বাগান সৃজন করা হবে। বর্তমানে চা-বাগানের অভ্যন্তরে ৫২৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী দৈনিক ১৭০ টাকা বেতন ছাড়াও ফ্রি চিকিৎসা, রেশন, বাসস্থান, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। উৎপাদনের বিক্রয়কৃত অর্থ থেকে সুনির্দিষ্ট হারে সরকারকে ভ্যাট প্রদান করা হয় বলেও জানান তিনি।
চা-বাগনের ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন জানান, এই বাগান থেকে উৎপাদিত ক্লোণ চা দেশে ও দেশের বাইরে অনেক চাহিদা ও খ্যাতি রয়েছে। কোদালার এই বিশাল চা বাগানের চা পাতার সুখ্যাতি সারা দেশে। যার ফলে দেশের সব চা বাগানের সাথে পাল্লা দিয়ে মানের দিক থেকে কোদালা চা বাগান নিজের স্ব মহিমায় জায়গা করে নিয়েছে। এই মান অক্ষুন্ন রাখতে চা বাগানের কর্মরতরা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। চা বাগানের উন্নয়ন হলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং স্থানীয় জনগণ নানাভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।