পৌর নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারকে ‘ভোট কারচুপি’ থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ক্ষমতার লোভে দেশকে ধ্বংস করবেন না।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় সরকারের প্রতি এই আহবান রেখে তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সরকারের কাছে আমার বিনীত নিবেদন থাকবে- নিজেদের ক্ষমতার উগ্রলোভের কারণে দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। আপনারা অনুগ্রহ করে গণতন্ত্রকে সুযোগ দিন। সবাই পরমত সহিষ্ণু হউন। নির্বাচনে কোনো ধরণের কারচুপি করার চেষ্টা করবেন না। একইসাথে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন বিগত সময়ের উপজেলা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম নির্বাচনের মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ঘণ্টা বাজানো হয়েছে। এই নির্বাচন আমাদের কী দেবে? যা কিছু করার পুলিশ বাহিনী ও মাস্তানরা করবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কী নির্বাচন হয়েছিলো, আপনারা দেখেছেন। আমি আশঙ্কা করছি, ঢাকা সিটি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, পৌরসভায়ও সেইভাবে হবে। উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয়-চতুর্থ ধাপে সেভাবেই নির্বাচন হয়েছিলো। রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘নির্বাসিত গণতন্ত্র, মানবাধিকার ভুলণ্ঠিত, উত্তরণে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, যুব দল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি শাহ আবু জাফর, আবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, শহীদুল ইসলাম চৌধুরী মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পৌর নির্বাচনের জন্য প্রণীত আচরণ বিধির সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রথম যে আচরণ বিধিটি প্রণয়ন করেছিলো, সেখানে বলা হয়েছিলো, মন্ত্রীরা এসে বক্তৃতা দিয়ে যেতে পারবে, নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন। যা কোনো নির্বাচনে অতীতে ছিলো না। তারপর বিজ্ঞ ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখলেন যে এমনিতেই তো জিতবো। মন্ত্রীদের বদনাম করে লাভ নেই। তাদের প্রচারণায় যাওয়ার দরকার নেই। এখন আচরণবিধিতে দেয়া হয়েছে যে দলের প্রধান প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। এটা আমাদের দলের প্রধানকে (খালেদা জিয়া) টার্গেট করে করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রাখার জন্য এমন অভিনব আচরণবিধি প্রণয়ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। পৌর নির্বাচন যা কিছু হওয়ার বাঘ মামাই করবে, আমাদের কিছু করার দরকার হবে না। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র না থাকে সেখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। আমরা বার বার বলে এসেছি, দেশটা আমাদের সবার। অনেক ত্যাগের বিনিময় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই দেশকে উচ্ছন্নে দিতে চাই না। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিয়া-সুন্নীর বিবাদ কোনোদিন বাংলাদেশে ছিলো না। তাজিয়া মিছিলে বোমা মারা হয়েছে। বগুড়ার একটি মসজিদে হামলা করা হয়েছে। এগুলো কিসের আলামত? এটা তখনই হয়, যখন দেশে গণতন্ত্র থাকে না। বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, যদি দেশে গণতন্ত্র থাকতো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হতো, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হতো; তাহলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো না। দেশে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ একাত্তরের মতো ফের রাজপথে নামতে সবার প্রতি আহবান জানান হাফিজ উদ্দিন।