শুরু করেছিলেন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে,
মোকাবেলা করেছেন প্রবাস জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত।
প্রায় ২০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে কুয়েতে এসেছিলেন তিনি, শুরু করেছিলেন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে। প্রবাস জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে আজ তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ করেছেন দেশেও।
বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলা সদরের এ প্রবাসীর নাম মোহাম্মদ মানিক মোল্লা (৪৪)। তার বাবা প্রয়াত মোজাফফর মোল্লা ছিলেন দর্জি দোকানদার। বাবার ঋণ করা টাকায় শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে এসে ২০ বছরের মাথায় মানিক গড়ে তুলেছেন ‘মিক্স ইয়াকি’ নামে একটি রেস্তোরাঁ, এটি দেশটির ফারওয়ানিয়া প্রদেশে অবস্থিত।
সরাসরি আগুনের তাপে যাকিছু রান্না করা হয় তাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘ইয়াকি’, ইংরেজিতে একেই বলে ‘গ্রিলড’। নামটা জাপানি হলেও এতে চায়নিজ ও অ্যারাবিয়ানসহ নানা সি ফুড ও বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়। ফিলিপাইন, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আরব দেশগুলোর নাগরিকেরা এ রেস্তোরাঁর মূল ক্রেতা।
মানিক বলেন, “দেশের বাইরে প্রথম আমি কুয়েতেই আসি। শুরুতে সাধারণ শ্রমিকের কাজ করতাম স্থানীয় এক আরবের কোম্পানিতে। একসময় চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার কথাও ভাবতে থাকি, সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ‘কেওসি’ কোম্পানিতে চুক্তির মাধ্যমে শুরু করি ব্যবসা।”
পারস্য উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে আসার ৯ বছর পর নানা ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় এক নাগরিককে অংশীদার করে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন মানিক মোল্লা। তবে শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা মানিকের পথ সহজ ছিল না, বারবার ব্যর্থ হতে হতেই একসময় সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি।
গত ২০ বছরে মানিক গড়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সেখানে হয়েছে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান। তিনি বলেন, “কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য মানসম্মত রেস্তোরাঁর বড়ই অভাব, এই চিন্তাভাবনা থেকে মাস দুয়েক আগে মিক্স ইয়াকি রেস্তোরাঁ চালু করি।”
মানিকের রেস্তোরাঁয় এক্সিকিউটিভ শেফ হিসেবে কাজ করেন বাংলাদেশের রাইসুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে কাজ করেন বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের আরও ২০ কর্মী।
রাইসুল বলেন, “নতুন রেস্তোরাঁয় খাবারের গুণ ও মানের প্রশংসা মোটামুটি সব কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশি কাস্টমারদের জন্য আছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা।”
স্ত্রী ও দুই ছেলে-সন্তান নিয়ে বর্তমানে ফারওয়ানিয়া প্রদেশেই বসবাস করা প্রবাসী মানিক বলেন, “এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চালু করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারছি। আমার সন্তুষ্টি এখানেই।”
কুয়েতে ‘ড্রিম ন্যাশনাল অ্যান্ড হোপ জেনারেল ট্রেডিং কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি’ নামে আরও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মানিকের। বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশেও। রাজবাড়ী সদরে গড়ে তুলেছেন ‘তাইবা ট্রেডিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’ নামে প্রতিষ্ঠান। ডিটারজেন্ট পাউডার, টয়লেট ক্লিনার, গ্লাস ক্লিনার, হ্যান্ড ওয়াশ ও নানা রকম মসলার গুড়াসহ ১৫টি পণ্য তৈরি করে তারা।
মানিক বলেন, “বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালোভাবে কুয়েতে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছি, আরও করতে চাই। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়।”
মরুর বুকে এ রেমিট্যান্স যোদ্ধা আজ অন্যান্য প্রবাসীর অনুপ্রেরণা, তার পরিশ্রমের গল্প কুয়েতের অভিবাসী মহলে বেশ চাউর। বাংলাদেশ সরকার যেন প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেন, এ প্রত্যাশা তার।