“ঐশী”রা জন্মায় না,
আমরা আমাদের সন্তানদের”ঐশী” বানিয়ে ফেলি …
প্যারেন্টিং আসলে এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।
বাবা-মা’রা এটা যদি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়,
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন হতেই থাকবে।
শিবলী মেহেদি
১২ নভেম্বর ঐশীর মুত্যুদন্ডের রায়ের খবর জানতে পারলাম। তাই ঐশীকে নিয়ে সামান্য কিছু কথা বলতে চাই আমিও।
ঐশী কিভাবে কার কার সাহায্য নিয়ে মা-বাবাকে খুন করেছে এগুলি জানা যেমন জরুরি, তার চাইতেও অধিক অধিক জরুরি এটা জানা যে, তার পারিবারিক বন্ধন কেমন ছিলো? প্রতিদিনের জীবন যাপন কেমন ছিলো? মা-বাবার সম্পর্ক কেমন ছিলো? মা-বাবা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিলো? তারা সন্তানকে কেমন সময় দিতেন? সন্তান যখন আজে বাজে কাজ করা শুরু করেছিলেন (প্রাথমিক দিকে) তখন তারা কি করতেন? সন্তানের বন্ধুদের খবর কি রাখতেন? সন্তানের ভালো মন্দে কিভাবে ‘রি এ্যাক্ট’ করতেন?
দেখুন, প্রচন্ড লেখাপড়ার চাপ তো আছেই, সাথে এই জেনারেশন দেখেছে-কিভাবে দেশের নেতা-নেত্রীরা দুর্নীতি করছে, কিভাবে হাজার হাজার মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে বা ভবন গুড়িয়ে, কিন্তু বিচার নেই। ওরা ‘লাইভ’ দেখেছে কিভাবে মানুষ কুপিয়ে মারা হচ্ছে। ওরা দেখেছে কিভাবে বাসে-ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে, কিন্তু বিচার নেই। ওরা দেখেছে, কিভাবে দেশের সম্পদ গিলে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নেই। ওরা সুযোগ পেয়েছে ছেলে মেয়ের অবাধ মেলা মেশার, ভালোই তো, ভালো না? ওরা সুযোগ পেয়েছে অশ্লীল কাজ করার। ওরা দেখেছে কিভাবে শিক্ষক ১৫০+জনের সাথে ‘শারিরীক সম্পর্ক’ করে। ওরা দেখেছে হাতের লেখা খারাপ হবার জন্য ১১ বছরের তানিয়ার হাত কিভাবে জখম করেছে তার টিচার। ওরা দেখেছে ইংরেজি কবিতা মুখস্থ না হবার জন্য কিভাবে ৬ বছরের শিশুর চুল টেনে ছিঁড়েছে তার আপন মা। ওরা দেখেছে, ক’বেলা নামাজ আদায় না করার কারণে কিভাবে শিক্ষক গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে তার মাদ্রাসার ১৪ জন ছাত্রীকে। ওরা দেখছে কিভাবে শিশু নির্যাতন হয় কিন্তু সবাই চুপ। ওরা দেখছে ঘরে কিভাবে দুর্বলের উপর সবলের নির্যাতন হয়, কিছু করার নেই। কারা ওদের ‘রোল মডেল’? ওরা দেখেছে শিশু সন্তান মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় কিভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। ওরা দেখছে একটু শরীর দেখালে বা আঁকাবাঁকা হয়ে দাঁড়ালে ফ্ল্যাট/গাড়ি পাওয়া যায় পুরষ্কার হিসাবে, আইডল পদবীও পাওয়া যায়। মানবিক গুণাবলি বৃদ্ধির চাইতে ওদের কাছে শারিরীক গুণাবলী অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কে কোন ব্রান্ডের পোশাক পড়েছে, কোন দামী রেস্টুরেন্টে খেয়েছে, কে কোথায় চেক ইন করেছে আর কোন থ্রি ডি মুভি দেখেছে, কার সেলফোন -এর ‘মডেল’ কতো উন্নততর, এগুলিই ওদের সফলতা।
আমরা মা-বাবারা সন্তানদের সময় না দিয়ে টাকা দিয়ে সময় কিনে নেই। আমরা মা-বাবারা কাজে ব্যস্ত থেকে সন্তানদের ছেড়ে দিয়েছি ওদের আপন জগতে, ‘বন্ধু ছাড়া জীবন অচল’ করে দিয়েছি। এভাবে বললে আরো অনেক কথাই তো বলা যায়, তাই ক্ষান্ত দিলাম।
তো, এই জেনারেশনের কাছে আমরা কি আশা করছি? ওরা মা-বাবার পায়ের তলায় লুটিয়ে থাকবে? শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে থাকবে? ভদ্রতার চরম নিদর্শন দেখাবে? যত্তোসব হাস্যকর কথা বার্তা…
আমাদের কপাল ভালো এতো অস্থিরতার মাঝেও এতো চাপ সহ্য করে ওরা বড় হচ্ছে তাও ওরা সকলে একসাথে বিগড়ে যায় নাই। এখনো সিংহভাগই লাইনে আছে এবং ভালো কাজ করার চেষ্টা করছে। ওদের পাশে থেকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে হবে এই আমাদেরকেই এখন থেকেই।