মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আজকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখছি যে, যেসব জাতি জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে তাদের শিক্ষার হার ১০০ ভাগ। শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি কোনো অবস্থাতেই উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করতে পারে না।
এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে লক্ষ্য করা গেছে যে, দেশের সর্বত্রে সরকারি ও বেসরকারি অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ঠিকই; কিন্তু মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছেনা।
ফলে প্রত্যেক পরীক্ষার ফলাফলে সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্কুল শিক্ষক, শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটিও এর দায়ভার এড়াতে পারবেনা বলে শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মত প্রকাশ করেন।
অতি সম্প্রতি এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় ঘটেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় কমেছে পাসের হার। পাশাপাশি কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যাও।
এদিকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডে পাশের হার কমেছে, কিন্তু বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এবার পাশ করেছে ৮০ দশমিক ২৬ ভাগ। যা গতবারের তুলনায় ৪ দশমিক ৫১ ভাগ কম। ২০১৬ সালে পাশের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৭৭ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ জন। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৬৬ জন।
উক্ত বোর্ডটির অধীনে মৌলভীবাজার জেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
তবে এবার এসএসসি পরীক্ষায় উপরোক্ত জেলা সদরের আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ফল বিপর্যয়ে এলাকার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ও অভিভাবকগণ চরম হতাশ, এছাড়া এনিয়ে এলাকার সর্বস্তরের মানুষদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপার জানতে আপ্তাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উনাকে পাওয়া যায়নি।
উক্ত স্কুলের প্রধান সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে আমি হতাশ নই, এবার হয়তো ছাত্রছাত্রীরা এসএসসিতে ভালো করতে পারেনি, কিন্তু আগামীতে নিশ্চয় ভালো করবে।
প্রবীণ এই শিক্ষক আরো বলেন, আমি এই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছি, সুতরাং এই স্কুলের জন্য কিছু করতে পারি, আর নাই পারি, তবে স্কুলের সার্বিক ক্ষেত্রে মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, সাবেক ইউপি মেম্বার ও বর্তমান স্কুলের শিক্ষানুরাগী সদস্য মোঃ মোশাইদ আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসির অপ্রত্যাশিত ফলাফলে আমি হতাশ ও লজ্জিত।
তরুণ এই শিক্ষানুরাগী সদস্য আরো বলেন, অন্যান্য অনেক স্কুলে আমরা দেখেছি যে, সেসব প্রতিষ্ঠানে স্কুল শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন; কিন্তু আমাদের স্কুলে এই চর্চাটি চরম অভাব।
তবে এসএসসির অপ্রত্যাশিত ফলাফলে লজ্জিত শুধু আমি একাই না, এর দায়ভার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটিকেও নিতে হবে।
আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, একতা সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপিত ও পালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবাদুল হক দুলুর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুন্নত শিক্ষা ও ফল বিপর্যয়ের সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ উল্লেখ করেন, ১. শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেই।
২. শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব মানসিকতার অভাব ও প্রাইভেট পড়া নির্ভরতা,ব্যবসায়িক মনোভাব। ৩. একটি বই কোম্পানির সাথে চুক্তি প্রতি বছর ৭০ হাজার টাকা, বিনিময়ে নির্দিষ্ট বই পড়তে শিক্ষকদের উৎসাহিত।
৪. দীর্ঘদিন শিক্ষক পদ শূন্য, এমনকি সহকারি প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকলেও অবৈধভাবে উক্ত পদে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ।
৫. নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই, দক্ষ মনিটরিং এর অভাব, প্রশাসনিক অদক্ষতা ইত্যাদি।
একতা সমাজ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরুণ সংগঠক গাজী আবেদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উক্ত স্কুলের ফলাফলে চরম অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, অতীতে এই স্কুলটিকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতাম, কেননা একসময় সব ধরনের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল ছিল।
আর বর্তমানে স্কুলটিতে একদিকে যেমন লেখাপড়ার মান খুবই অনুন্নত, ঠিক তেমনিভাবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অবহেলা, স্কুল পরিচালনা ও সার্বিক ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা সদ্য প্রকাশিত এসএসএসি ফলাফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এছাড়াও এসএসসি পরীক্ষায় আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের ফল বিপর্যয়ের ব্যাপারে এলাকার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ও অভিভাবকগণ সহ এলাকাটির সর্বস্তরের মানুষ স্কুল শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতার কথা উল্লেখ করে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন।
উল্লেখ্য যে, এবার এসএসসি পরীক্ষায় আপ্তাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে পাশের হার বেড়েছে ঠিক; তবে স্কুলটির ফলাফল ছিল প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, জানালেন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ও অভিভাবকগণ।
যদিও এবছর প্রকাশিত ফলাফল ছিল ৬৯ দশমিক ৪১ ভাগ , যা গতবারের তুলনায় ৬ দশমিক ৫১ ভাগ বেশি।