জাকির সিকদার : ইউনিয়নে নির্বাচনী হাওয়া বইছে গেল এক মাস ধরেই। দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের হাওয়া যেন ঝড়ো বাতাসে রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে হওয়ায় তা নিয়ে জনমনে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে একটু বেশিই বটে। তবে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও ক্রমশই আতংক ভর করছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যতই
দিন যাচ্ছে ততই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সংঘাত বাড়ছে, বাড়ছে রক্তপাতের ঘটনাও।
সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাই এসব সহিংসতার জন্ম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর বেশিরভাগ জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকেরা। অবশ্য, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন হারানোর ফলে তাদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। স্থানীয় প্রশাসনের নীরব সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বিধির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না নৌকার প্রার্থীরা। ‘নৌকা প্রতীক মানেই নিশ্চিত বিজয়’ এমন ধারণা পোষণ করে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া তারা।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। প্রচার-প্রচারণায় সর্বত্রই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা। থানা-পুলিশ বা স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
গত তিন সপ্তাহে বিভিন্ন জেলায় সহিংসতায় আহত হয়েছেন কয়েক’শ লোক। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে চারজন। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে গত সোমবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সামসুল হকের খালাতো ভাই আশরাফ ফকির (৩৫)। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় গত মঙ্গলবার রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন বিএনপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ভাগ্নে ছাত্রদল নেতা শামসুল হক (২৮)।
তার আগে ২২ ফেব্রুয়ারি বরগুনার আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হন বশির উদ্দিন (৩৫)। গত বৃহস্পতিবার ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরো একজন। এখনো পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে দেশ। এমন জোয়ারে যোগ হচ্ছে ভয় আর ত্রাসও। আতংকে যেন প্রহর কাটছে না অনেক ইউনিয়নবাসীর। সহিংসতা বাড়তে পারে নির্বাচনের পরে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার দলীয় লোকজন প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে সারাদেশে আতংক সৃষ্টি করছে। আমাদের প্রার্থীরা মাঠে দাঁড়াতেই পারছে না। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ, ভয়ভীতি দেখানোসহ অনেককেই ঘরবাড়ি-ছাড়া করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রকার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।’
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহিংসতা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সেইভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। পরবর্তী নির্বাচনগুলো অনেকটাই গোছালো হবে বলে মনে করি।’ সহিংসতার ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে সহিংসতা পুরানো। তবে যে কোনো সময়ের চেয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় সহিংসতা কমে আসছে।’
মোট ছয়ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২২ মার্চ। এই নির্বাচনে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে লড়বেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। এরআগে পৌরনির্বাচনেও একইভাবে দলীয় প্রতীকে লড়েছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। ওই নির্বাচনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ভরাডুবি হয়। বিএনপি অবশ্য নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনে।